অনুপম রায়ের কবিতা
১.
আমার চোখের সরলতা
ছিনিয়ে নেওয়ার স্পর্ধা
তুমি পাও কোথা থেকে?
লম্বা ট্রেনের বাঁশি কেটে
নিয়ে যাও অস্বাভাবিক মেঘ।
দূরে অবসন্ন ধানক্ষেত
ছাই রঙা বৃষ্টির প্রলেপ,
আমাদের কামরায় হাঁটু জল।
২.
যে ঘুম, চোখ থেকে সম্পূর্ণ মুছে যায় নি
তাকে আমি আদর দিয়ে জাগাই,
তার গড়িয়ে পড়া স্বপ্নরেখায়।
কারো ফেলে আসা পায়ের ছাপ,
ভিজে ওঠে মাটি সহজ আনন্দে,
শান্ত, ধীর গতিতে প্রেম এসে জড়ায়।
৩.
ধুলোর অনাদর দু পায়ে,
তোমার বালিকাহৃদয়ে সারা রাত জাগি,
যে কোনদিন তা ফুরিয়ে যেতে পারে।
অনিশ্চয়তার গর্তে খেলা করে।
লক্ষ্যহীন গতিবিধি স্বচ্ছ দেওয়ালে
ধাক্কা খেতে খেতে
নতুন ঢ়ধৎঃরপষব এর জন্ম দেয়।
৪.
কী এমন তীর মারিতেছি?
কী হইবে প্রাণ রাখিয়া?
তাহার চাহিতে শ্রেয় নয় কি
যদি শেষ আলো মাখিয়া … বিদায়।
৫.
আমিও তো চাই তারাভরা রাতে
গভীর মনযোগে আমরা নক্ষত্রের
গ্রাভিটি মাপব জলের ট্যাঙ্কে বসে
পাশাপাশি পা ঝুলিয়ে, টেলিস্কোপে
ভাগাভাগি করে নেব মহাকাশ ।
আর যুগান্তের ওপার থেকে তোমার
কথামালা এসে জড়াবে আমার আঙুল।
৬.
ফেলে আসা সৈকতে হুহু করছে জ্যোৎস্না,
পাথরে পাথরে লাফিয়ে আমি এগোই।
গতি থাকলে তবেই ব্যালেন্স থাকে,
থেমে গেলে,
আমিও সবার মতো,
পড়ে যাই।
৭.
তোমার পায়ের কাছে ছিলাম,
জল ছিল তাই ভেজা লাগে
সাটিন সময় আর ভেসে থাকা মুখের আদল।
কুয়াশা ভাগ করে
কাছাকাছি ছিলাম। সব প্রেম ব্যালকনি থেকে ঝরে পড়ে না
নির্দিষ্ট হাসি অথবা কান্নায়,
কিছু থাকে নীরবতায় অমীমাংসিত।
৮.
মানুষের হাতে যখন অনেক সময় ছিল
অর্থাৎ বয়স ছিল খতরনাক চঞ্চল,
তখন থেকেই সে নষ্ট করেছে।
হতভাগ্য সে নয় যার কিছু নেই,
যে তুমি কিছুই রাখতে পারাে না,
সবকিছু হারিয়ে ফেলো আর
ক্রমে ভোতা হয়ে থাকো, হতভাগ্য তুমি।
যদি সব বুঝে গিয়ে থাকো
তাহলে মানায় না তোমাকে এই জীবন
যাও গিয়ে লাথি মেরে ভাঙো
মুক্ত করো নিজেকে
এই কদর্য আলিঙ্গন থেকে।
*অনুপম রায়: কলকাতা; কবি ও সঙ্গীতশিল্পী