অমিতাভ সরকারের একগুচ্ছ কবিতা
অঙ্ক শেষের আগে
আজকে ঘুমোতে দেরি হবে,
এখনো অনেকটা লেখা বাকি।
বেশ কয়েক পাতা হয়ে গিয়েছিল, একজন লেখক আসায় সে আশা মাটি হয়ে গেল।
আবার কাল সকালে অফিস, সারাদিন কাজ,
সেই রাত দশটায় বাড়ি ফেরার পর লেখা নিয়ে বসতে আর ভালো লাগে!
তবু বসতেই হয়।
পরশুদিন অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে।
ভদ্রলোকের যে একটাই কথা হয়।
অনুজের কাছে অনুযোগ করে লাভ কি!
সাহিত্যিকের জীবন নিজেই মস্ত একটা মহাকাব্য।
ত্রিশ পাতার নাটকের এখনও সবে আট। আরও…
আমি ও মনের অবুঝ পাতারা
আমাদের মনের বাগানে প্রতিদিন হরেকরকম ফুল ফোটে। লাল, সবুজ, হলুদ বিচিত্র সব ভুল।
তাতেই কত বুভুক্ষু দামের বেপরোয়া, অস্থিরতার ভিড়।
পাখি তাই দেখতেই কাজ কামাই করে ফেলে। মৌমাছি, মথ, ফড়িং –
ঘাসের জীবন মোড়কে শিশিরের চাদর পেতে আগুন পোহায়।
রূপকের রূপে মুগ্ধ সবাই। সবাই রংটাই লেহন করে ডুবে যেতে চায়।
এত কাছে গিয়েও নদীটা আসলে চেতনার অনেক দূরে।
আমি কেবল অপ্রাপ্তির আনন্দছায়ায় বসে না-পাওয়ার খুশি গান গাই। ব্যস, তাতেই দুঃখ শান্তি হয়ে ওঠে।
আমি, পাখি, দুঃখ সবই সুর বাগানের সবুজ গাছের এক একটা অবুঝ পাতা।
আন্তর্জালিক
ফোন করেছিলিস।
ভালো করে কথা বলতে পারিনি।
টিভি চলছিল।
না বুঝেই হ্যাঁ হ্যাঁ করে গেছি।
এখন বিজ্ঞাপনের বিরতি।
আবার জল গরম করলাম।
চা-টা তখন একদম ভালো হয় নি।
শিঞ্জিনী আর রিষাণের অভিনয় তোর এত ভালো লাগছিল!
স্মরণিকা
এই তো সেদিনের কথা। বাড়ি গিয়ে সুখবরটা দিয়ে আসলাম। খুব খুশি হয়েছিলেন।
আয়োজন সামান্য থাকলেও ভালোবাসার মনের খাবারে আমার কাছে সেটাই পরম পাওয়া।
ফেরার পথে উপহারস্বরূপ, একটা কলমও দিয়েছিলেন, লেখার জন্য।
অনেক দিন কেটে গেলেও কলমটা দিয়ে আজও কিন্তু লেখা বেরোয়।
যাঁকে নিয়ে লেখা, শুধুই তিনিই দেখে যেতে পারলেন না।
আমরা বর্তমানের কাছের মানুষগুলোকে নিয়ে বড্ড দেরিতে ভাবি।
আর সাহিত্যিক হলে তো আর কথাই নেই!
পরানুভবের পদ্য যাত্রায়
মনে হয় আপনি বইগুলোর দাম দিতে ভুলে গেছেন।
ছবির মেঘলা রাজ্যে অক্ষরের মূল্য চিরকাল বেশ কমই ছিল, আজও তাই আছে, আর…
জীবনের আয়ু বৃদ্ধির বাৎসরিক এই ছুটে চলা লক্ষ্যের নৈশ উৎসবে শীতকালীন প্রচেষ্টার জটাল মেঘলা
অঙ্কের মুখ ঢাকা কাগুজে সময়ে আলোকিত
মনের আকাশে চাঁদটাকেও আজ আর চোখে পড়ে না।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন।
আবার কখনও …
*কবি অমিতাভ সরকার: আনন্দলোক আবাসন, বারাসাত,কলকাতা-৭০০১২৪, ভারত।
আরও পড়ুন- মির্জা গালিবের কবিতা