আল-মাআরি এর সুফি কবিতা
সত্য তার মুখ লুকায়
ঘন ঝোপের ছায়ার কাছাকাছি আবাস থাকে অভিজ্ঞতার ,
যে তার মন ও জীবন দেয় সে তা করতে পারে শিকার।
কতো কতো মাস আর বছর আমি থেকেছি বাইরে!
অথচ এখনো আমি আছি নিজেকে বোকা আর ভাঁড় মনে করে।
আর মিথ্যা দাঁড়িয়ে থাকে তারার মতো উলঙ্গ হয়ে,
কিন্তু সত্য এখনো ঘোমটা আর পর্দায় রাখে মুখ লুকিয়ে।
এখানে কি আছে কোনো জাহাজ বা তীর
যার দিকে প্রসারিত হয়ে দুহাত আমার
এগিয়ে গিয়ে আঁকড়ে ধরতে ধরতে
আমাকে রক্ষা করবে এই ক্রুর সমুদ্র হতে?
বজ্জাতদের অজুহাত
না করো,
যখন তুমি কাজ করো লজ্জার;
বজ্জাতদের অজুহাত,
“আমার পূর্বপুরুষেরা করেছিলো এই কাজ। ”
সময় এবং স্থান
দুটি অদৃষ্ট এখনো আমাদেরকে ধরে রাখে,
একটি ভবিষ্যৎ আর একটি অতীত ;
দুটি জাহাজের বিশাল আলিঙ্গন
আমাদের চারপাশে – সময় এবং স্থান।
আর যখন আমরা জিজ্ঞাসা করি শেষে
কী উদ্দেশ্যে তিনি আমাদের করেছেন নির্মাণ;
ভেসে আসা কিছু উত্তর শোনা যায়
যা কোনো সরল কথা করেনা উচ্চারণ।
রাতের ডালপালা হচ্ছে মৃত্যু
আমি প্রতিদিন বিদায়কে নিলামে ডাকি, তার পছন্দমতো,
একবার আমার থেকে চলে গেলে, আর ফিরে আসবেনা।
তিন তারকাযুক্ত হওয়ার সহজ সুবিধা হচ্ছে অযত্নে ঘুরে বেড়ানো
যদিও তাদের পদমর্যাদা অনেক খুশির।
আমার জন্য এটা এমন যেন আমি এক যাদুকরী পুরোনো জন্তুর পিঠে চড়েছি,
যখন গাছের ডালের উপর প্রসারিত হয়
টিকটিকি দুপুরের রোদের তেজ পোহায়।
মৃত্যু রাতে ডালপালা ছড়ায় যখন বন্ধু আর শত্রুরা ঘুমায়,
আর চিরকাল চলমান থাকে যখন আমরা আরাম করি স্বাচ্ছন্দ্যে ।
বর্তমান সময় তোমার
শহরের শীর্ষস্থানীয় আলেম তার বন্ধুকে কবর দিতে বেরিয়েছিল ;
তোমরা কি দেখোনি যে সে কবর থেকে কোনো শিক্ষাই আনেনি?
বর্তমান সময় তোমার ; অতীত, একটি স্বপ্নের টলোমলো ;
আর যা থেকে যায় তা থেকে তোমার জন্য আর কিছুই নেই মিস্টি রসালো।
জীবনের তিক্ত তৃষ্ণা
ইস, আমাদেরকে যেতে দাও,
যাদের মনোভাব নিশ্চিত আর আমাদের
দৃঢ় ও দ্রুত সাহসিকতা ধারণের শিক্ষা দেয়,
দুর্ভাগ্য মিলিত হতে আমাদেরকে অনুসরণ করে,
তাতে অবশেষে আমরা মরে যাই।
জীবনের তৃষ্ণা, আমার কাছে নর্দমার মতো তিক্ত ;
আর দেখো, তিক্ত সত্যের ভেতর,
আমরা তা বমি করি আবার।
অনিশ্চয়তার পথ প্রদর্শন
আমি জন্ম পছন্দ করি না, বৃদ্ধ বয়সও নয়, বাঁচতেও নয় :
অতীত যা দিতে ইচ্ছুক হবেনা বর্তমান কি তা দিবে?
এখানে অবশ্যই আমি করব অবস্থান, অপ্রস্তুত দুই হাতের দুর্ভাগ্য দ্বারা,
এবং ত্যাগ করবোনা যতক্ষণ না অবস্থান হয় পরিবর্তন।
তুমি মিথ্যা – তোমার গল্প অনিশ্চয়তা ছাড়া কিছুই নয়।
লজ্জার কলংকের জন্য তুমি কি পাল্টাও?
এটা কি একই রকম পরিবর্তনহীন নয়?
কে সমাধি থেকে নিরাপদ?
দিনের পর দিন ধরে পুরোপুরি
অন্ধকার ঈশ্বরের দৌড়
যখন উদিত সূর্যে উদ্ভাসিত
না হয় এক ভোর।
কোনোকিছুর পরিবর্তন আর চলে যাওয়া স্বত্ত্বেও
পৃথিবী অবিচল থাকে দাঁড়িয়ে
তার পশ্চিম দিকের সবকিছু
আর পূর্ব দিকের সকল ভূমি নিয়ে।
কলম প্রবাহমান থাকে
আর আদেশ পূর্ণভাবে কার্যকর হয়,
কালি শুকিয়ে যায় চামড়ার কাগজে
যেন তা ঘটে ভাগ্যের ইচ্ছায়।
রাজা কি রাখতে পারে নিরাপদ
তাকে বেষ্টিত সভাসদগণকে –
অথবা সিজার কি রাখতে পারে
অভিজাত ব্যক্তিদের – কবর থেকে?
আমাদের পায়ের তলায় দম্ভ থাকে
ভবিষ্যতে ভ্রমণ করার পর তার দুঃখ অনেক,
দিনগুলো আহ্বান করে এবং বলে,
“চলে যাও, আর প্রবেশ করো কবরে। ”
কতোবার আমাদের পা পিষ্ট করেছে তার তলার ধূলি
দাম্ভিকের ললাট, একটি সুদর্শন মাথার খুলি।
জীবনের সংক্ষিপ্ত যোগসূত্র
যখন আমি গাঁথতে থাকি
মুক্তাগুলো ইচ্ছার,
হায়, জীবনের অতি সংক্ষিপ্ত যোগসূত্র
তাদেরকে করে অস্বীকার।
প্রচুর আয়তন তবুও মানুষের আশা
সবকিছু করতে পারেনা ধারণ ;
ভাগ্যের সারমর্ম ছাড়া
কিছুই না তার জীবন।
আরও পড়ুন- রনি আহাম্মেদ এর সুফি কবিতা