একগুচ্ছ কবিতা- জামিল হাদী
শত্রু
জানালা খুলে দিলেই কাঁদানে গ্যাসের মতো একদলা রোদ ঢুকে পড়ে ঘরে। চোখ ঝাঁ ঝাঁ করতে থাকে।
স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন বা তন্দ্রামগ্ন ঘোর যেটাই বলি…
চোখের পাতায় বেয়াড়া শিশুর মতো পা ঝুলিয়ে বসে থাকে তারা।
তারপরও চোখ জেগে উঠতে থাকে।
ঝাঁ ঝাঁ চোখদুটো খা খা করে উঠতে থাকে।
যেন ঘরে রোদ না ঢুকলেই কেবল তোমাকে দেখতে পাওয়া যায়।
যেন তুমি কখনো ছিলেইনা না-দেখার বাইরে।
পলানি
মাদুর চিনিস?
হারিকেন?
আছাড়ি? দা? নিড়ানি?
মাটি চিনিস?
চালন চিনিস?
শিলের পাটা, চুলোর ফুঁকনি?
ক্ষেত? ক্ষেতের আইল?
শিমের মাচা? জিয়ে মরিচ? নলেন গুড়?
কিছুই চিনিস না তাইলে তোর মার কথা তোরে কইয়ে লাভ কী?
তোর মারে বেচে দিছে কোথায় জানি! কারা জানি।
আমি কিছুই জানি না।
শুধু জানি যারা বেচে দিছে তাদের চেহারা
তোর মতোই অনেকখানি।
কন্ট্রাক্ট কিলার
যারা সর্বস্ব হারা হয়ে যেতে থাকে,
তারা প্রথমেই বিক্রি করে দেয় সৌজন্যের জানালা।
তারপর বিনয়বোধের অতি দামী শো-পিসগুলো রেখে আসে ভাঙারির দোকানে।
দুটো ভালো কথা বলার নমনীয় যে কন্ঠস্বর তাদের সম্পদ ছিলো, সেটা তারা নিলামে তুলে দেয়।
বুকে জড়িয়ে ধরা স্নেহী হাতদুটোকে তুলে রাখে শীতকালীন পোষাকের আলমারিতে।
এখন তাদের হাতদুটো চাবুক।
সর্বস্ব হারাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকাতে বাধ্য করলে পরিণতি তেমন কিছু হয় না।
শুধু পৃথিবীটা অনেকখানি পাখির পেটে চলে যায়।
পাখিটার নাম শকুন।
স-র্ব-স্ব-হা-রা-দের কন্ট্রাক্ট কিলার।
রঙধনী
নিবন্ধন হয় নাকি বন্ধুত্বের?
ভালো লাগার কথা কে জানিয়েছে দরখাস্ত লিখে?
বৃষ্টি পড়ার ছাড়পত্র লাগে?
প্রতিবাদলিপি দিলেই কী ভাঙন ভুলে যায় নদী?
শো-কজ নোটিশে ঝড় থামে?
জাহাজের খালাসি হয়ে ভুলে গেছি প্রশ্ন করা
যেভাবে ফুল ঘৃণা করে ফুলদানী।
তবু প্রশ্ন রাখি। প্রশ্ন জন্ম দিই। উত্তরমূক প্রশ্ন।
প্রশ্ন করতে করতেই বুঝে যাই….
ভালোবাসতে পরিচয় পত্র লাগে না।
পরিচয়ের আবার পরিচয় পত্র হয় না কি!
*কবি জামিল হাদী- খুলনা। তাঁর প্রকাশিত বইসমূহ- কোথাও না কোথাও, কোন এক শিরোনামহীন দিনে, বেদুঈন মাস্তুল, অশ্বারোহীর পুঁথি, আহমাত আরিনের কবিতায়, সিন্ধু ঈগল… শোনো!
আরও পড়ুন- লাবণ্য কান্তা’র কবিতাগুচ্ছ