একগুচ্ছ কবিতা- রায়ান নূর
শঙ্খিনী
শঙ্খিনী
তুমি মুদ্রা চেনো
সাপুড়ে চেনো না
কোন মুদ্রায় কোন হস্ত
হালে ইস্তেমাল হয়
তাও তুমি জানো না
মিছে করো ফণার আস্ফালন
কবির ফাঁদে পড়ো না
যদি সে প্রেমিক হয়
তুমি সন্ন্যাসীর সাথে মেলাও হাত
যার মনে গৃহী হবার বাসনা ৷
সবখানে ফেলো না নিঃশ্বাস
খেলনা হয়ে যাবে
সবজায়গায় ছড়ায়ো না বিষ
নিঃশেষ হয়ে যাবে
সমাবেশে তুলো না লম্বা ফণা
সাপুড়ের বীণে উন্মাদ হয়ে যাবে
ফিরে যাও,একাকিত্ব করো যাপন
যদি কখনো প্রেমিকা হও
তবে এক্ষণি ভুলে যাও
আমার কবিতার কথা ৷
প্রত্যূষে
একদিন খুব ভোরে জেগে উঠে
হয়তো আমি জানবো
আমি আর বেঁচে নেই ৷
আমাকে দাফন করবে ওরা
দূরের কোন এক ভূতুরে জঙ্গলে,
রাতে শৃগালের দল
তাজা মাংসের গন্ধে খুঁড়বে মাটি
আরচেটে খাবে আমার মগজ
যেখানে বছরের পর বছর
বিনিদ্র রজনীর যন্ত্রণা সয়ে
সঞ্চয় করেছি আটটি ভাষার থলি ৷
কেউ বুঝবে না, জানবে না কেউ
ইঁদুরে খেয়ে যাবে অগোচরে
জমানো পার্থিব জ্ঞানের কাগুজেপুতলি ৷
ভোর হবে, দিন হবে, রাত হবে
জাগতে পারবোনা শত চেষ্টায়
পাবোনা কো একবিন্দু জল
অঘোর ঘুমের সেই তেষ্টায় ৷
একদিন ভোরে ঘুম থেকে
জেগে উঠে দেখব আমি
আমি আর বেঁচে নেই ৷
কিছু স্মৃতি
প্রিয়া তোমার চোখের পলক
আজো ভেসে ওঠে মনে;
মেহেদী রাঙানো হাত আজো
হৃদয়ে জাগায় শিহরণ
আর মনে পড়ে
কেঁচোর মত যখন হেটে যাও
আমাকে পিছু ফেলে ৷
ঘঙরু-ধ্বনি আজো বাজে কানে
যখন ময়ুরের পায়ে
বাধা থাকত গুলরুর নুপুর;
যার ব্যবচ্ছেদে দস্যু গুফরান
মোমেন—দরবেশ বেশে পার
করে ছিল আঠাস বসন্ত,
সেই রহস্যের খোজে—
আমি প্রিয়তমা বড়ই অভাগা
তোমাকে খোজার নিশানা
এতটুকু রাখিনি স্মৃতির পাতায়,
শুধু তোমার নামটুকু রেখেছি
কয়েক ছত্রে
কিছু কবিতার খাতায় ৷
বেলাভূমি
আধারে তুমি হারিয়ে যেয়ো সাদা পালকের বেশে
জোছনায়,নক্ষত্রের আলোয় আর ভোরের হাওয়ায়
হারিয়ে যেয়ো তুমি রামধনু ধরে আগুন্তকের দেশে
ফিরিবে না জানি যেতে চাও যেয়ো কালের খেয়ায়৷
মনভরে পড়ে নিয়ো শাখা,নোলক, বাদামী টিকলি
বধুবেশে পাশে বসো কিছুক্ষন শতাব্দীর কিনারে
একটি কথা—শুধু একটি কথা শুনে রেখো আমার
কোকিলের মত কেটে দেব একাকী নদীর ধারে
গাছের ছায়ায় বুনিব হাজার বছরের মিতালী
পেচার মত চেয়ে রব ফেরার পথে ওগো তোমার ৷
তুমি যেয়ো শালিকের বেশে বাহারী শাড়ী পড়ে
আজন্ম দুচোখ পড়ে রবে ধূলোয় হাজার বছর ধরে
তোমার ছায়ায় আকড়ে থাকবে অমরের স্বাদ ৷
আরো পড়ুন- আনিসুর রহমান অপুর কবিতা