একগুচ্ছ কবিতা- আনিসুর রহমান অপু
দৃশ্যের ধূসর রঙ
এমন মুখের আদল আশা-তো করবেই প্রসঙ্গের প্রসন্নতা ।
বিষণ্ণতা যদিও কোথাও কোথাও নিয়েছে বাঁক—
দৃশ্যের ধূসর রঙ কিছুটা নিস্প্রভ করেছেও কোমলতা।
অদৃশ্য যে টান বিষণ্ণ উজান বেয়েও রেখেছে স্রোতরেখা তার ,
কাঁদো মেঘ, হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদো—
নিজের নির্জনে রেখেছ লুকিয়ে কান্না অফুরান ,
অকাল হারানো বেদনা ব্যাপক—
ক্রমশ অচেনা হয়ে গেছে কাছের মানুষ, ঘটমানতার গল্প ।
একে একে হারিয়ে ফেলেছ ফাগুনের সিঁড়ি, রোদের খামার!
কোন ঋতু মেলাবে মসৃণ জোছনার হালখাতা !
কোথাও পৌঁছাতে পারছে না আকুল ইচ্ছের হাহাকার—
প্রাণের উচ্ছ্বাস জড়ানো যা কিছু পংক্তি এই সুন্দরের সম্ভাষণ—
সে কি শুধু অর্থহীন আবর্তন ?
কোনো কোনো কবিতার গায়ে ছুঁয়ে থাকে আলো—
যাপনের জয়ধ্বনি!
কোনো কোনো নারী, নদীর মতোন নরম নিবিড় বাঁকে বাঁকে
বুনে যায় নিভৃত স্রোতের শিহরণ।
জীর্ণ পাতার আড়ালে অথচ আকাশ একা আঁকে
শূন্যতার দৃশ্যপ্রকরণ—
এতো গরমিল পেরিয়েও দিনের-শেষে যা কিছু পাওয়া
হাত ধরে তার কেন বসে থাকে নিঃসঙ্গ নীলিমা!
ওগো প্রেম , অনেক তো হলো চাপান উতোর—
বুকের ভেতর বয়ে চলেছো গন্ধমাদন!
রয়ে গেছে অচেনা আজও বিশল্যকরনী—
তুমি জানো কারে ভালোবাসো, কার জন্য পোড়ে বুক—
অনেক হয়েছে অন্তঃক্ষরণ ,
এবার তোমার নীরবতাকে কথা বলতে দাও—
বুকখোলা বারান্দার মতো প্রেম
নিজেকে এতোটা তুচ্ছ মনে হয়নি কখনো আগে !
কী গভীর অনুরাগে অথচ একদা এই তুমি দিয়েছিলে বুকখোলা বারান্দার মতো প্রেম –
অধীর-অস্থির অপেক্ষারা গভীর ভালোবাসায় গুনতো প্রহর !
খুশির নহর বইয়ে দিতো যে উপস্থিতি – উপেক্ষায় আজ সে-ই দূরের শহর ।
জানি না কী দোষে এমন বদলে গেলো ঘটনার ফ্রেম !
পাকে চক্রে সুন্দরের সাথে সেই নক্ষত্র নিবিড় রাত আর ভালোবাসামগ্ন দীপ্র দুপুরেরা হিম হয়ে গেছে তুষারে তুমুল –
চাইলেই মুখের উপর যার দরোজার খিল টেনে দেওয়া যায় ,
বন্ধ করে দেওয়া যায় যোগাযোগের জানালা- খিড়কি তাবৎ ;
না-ঘুমানো এই নগরীর প্রতি বাঁক জানে ক্রিসমাসের সে সমর্পণ ! সান্তাক্লজের বিস্ময়ী উপহার নিয়ে এসেছিল প্রত্যয়ী প্রণয় !
এদিকের পূ্র্বা নদী আর ওদিকের হাডসনের হৃদয়
শর্ত আর স্বার্থহীন নিবেদনে খুঁজে নিয়েছিল আকুলিবিকুলি সবুজ সমীকরণ , বিনা ঝড়ে কী-করে সেখানে ঢুকে গেলো বেনোজল ?
একদার সুখে প্লাবিত নদীরা আমাদের বড়ই বিমর্ষ আজ ,
সেই প্রশস্ত ছাদবাগান, আকাশ ছোঁয়ার সিঁড়ি আর নদীর সান্নিধ্য এখনও আকুল ডাকে উপমামগ্ন কবিতাদের ।
লোহার বাসরে অথচ বেচারা লখিন্দর
সয়ে যাচ্ছে সুতানাগের অজুহাতের ছোবল প্রবল !
সেঁটে আছি তবু তার সাথে
যার হাতে দোমড়ানো গল্প দিনরাতের বিশ্বাস, শান্তি-স্বস্তি গুম
সেঁটে আছি তবু তার সাথে বেশ, মহা ধামধূম;
প্রায়শ্চিত্তহীন
জানি ভুল প্রায়শ্চিত্তহীন
এমনকি গোবর খেলেও যার হয় না মাশুল
পথ-মত ও চাওয়াপাওয়ার ঐক্য
হয়নি, হবে না কোনোদিন
বৃথাই বাড়বে অশ্লীল বিতণ্ডা আর অপ্রিয় কথন,
যেভাবেই ভাগ করি থেকে যাচ্ছে কিছু পিছুটান
পকেটহীন জামার থেকে খুইয়ে ফেলেছি সমস্ত পাথেয় ,
ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ও শেষ
এখন অপেক্ষা শুধু দিন ফুরোনোর।
ব্যাধি
কিছু রোগ সারাতে পারেন আয়ুর্বেদী কবিরাজ,
মকর্ধ্বজ, অশ্বগন্ধা, চ্যাবনপ্রাশ, কূটজারিস্ট, মহাদ্রাক্ষারিস্ট আর
বহুগুন সম্পন্ন নানান সালসায় শক্তি-সাধনার নাম-ডাক ;
ঝাঁক ঝাঁক রোগী ভালো হয় হামদর্দ হারবালে
কালে কালে শুনেছি এমন সুনাম সবাই—
শুনি তো কতো কথাই, আছে কতো অব্যর্থ দাওয়াই-
ক্রিকেট পিচের মতো খ্যাতনামা টাকেও এখন গজায় নতুন চুল,
লাল গেন্দা ফুল দিতে তবুও প্রেমিক করে ভুল-
ভুল হয় চিনতে চাঁদের তিথি, চিনতে মানুষ-
মানুষের বেশে অসুরের দম্ভ-আস্ফালন, ক্ষমতার খাই,
প্রাত্যাহিকতার চারপাশে বোনে লোভ-ক্ষোভ, দাবানল-
দানবের হাতে চলে যায় পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ !
শত জট ও জটিলতায় রোবটিক আজ মানুষের মন
সমব্যথী স্বজনের হৃদয়ের ধন মেলে তবু কদাচিৎ-
অমাবশ্যা-পূর্ণিমায় বাড়ছে ব্যাপক ব্যাধি।
জড়ি-বুটি, তাবিজ-কবচ, পানিপড়া আর ঝাড়ু থেরাপিতে
সত্যিই কি সারে কালাজ্বর, জ্বীনের আছড় ?
আছে কিছু রোগবালাই আবার দুরারোগ্য খুব —
অস্ত্রাপচার ব্যাতীত যার থেকে মুক্তি নাই ;
জানা নাই কোন শুশ্রুষায়, কোন ধনন্তরী সারায় ঘসেটি সিম্পটম-
বিকৃতমস্তিস্ক শয়তান রুয়ে দেয় বিষ যাপনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে-
রাষ্ট্র যন্ত্রের কলকব্জায় ছড়িয়ে রিরংসা ও প্রতিহিংসার
হেমলক মিসমার করে দেয় সমস্ত অর্জন!
শুনেছি যেখানে ব্যর্থ এ্যালোপ্যাথী সেখানেও নাকি পেয়েছে সাফল্য মহামতি হ্যানিম্যানের হোমিওপ্যাথ—
জানা নাই অথচ, সত্যিই জানা নাই আমাদের কোন ওষুধে সারানো যাবে রঙ-হেডেড সাইকোপ্যাথ !
*আনিসুর রহমান অপু- নিউইয়র্ক প্রবাসী কবি।
আরও পড়ুন- মির্জা গালিবের কবিতা