একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা
মন্ত্র
ফরিদ কবির
গুহা চিত্রে গেঁথে ছিলে এতোদিন, এখন বুঝেছো
অন্ধকারে সৌন্দর্য ফোটে না!
আমি তবু চিত্রসহ সূর্যালোকে এনেছি তোমাকে
সকল শুশ্রুষা দিয়ে ময়ূর শরীরে তুলে দিচ্ছি বৃষ্টিগান
বরফ গলছে- এই দৃশ্য
ছবি করে ভাসিয়ে দিয়েছি তিন সহস্র নদীতে
যাতে মৎস্যপুরী পূর্ণ হয়ে ওঠে ডিমে, শ্যাওলায়
যতোটা বরফ, জল তার ঠিক ততোটাই
স্রোতবহ সবটুকু পানের সাহস
আমি ছাড়া আর কেউ সঞ্চয় করেনি।
একজীবনের ভালোবাসা
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান
একজীবনের ভালোবাসা তোমায় দিলাম।
তুমি আমার সকালে যুঁই, সন্ধ্যাতারা,
মধ্য বেলার সুরের বাঁশী তন্দ্রাহারা;
এই তো যেমন পাশেই আছি, পাশেই ছিলাম।
কতকালে স্পর্শরেণু পরাগ ভারে
পড়ল নুয়ে মাটির সজীব গন্ধ বুকে,
জাগল আলোয় গোধূলিতে স্নিগ্ধসুখে,
নিত্য দিনের উজ্জ্বলতায় অন্ধকারে।
সেই সহসা উজান স্রোতের তীব্র গতি
ভাঙল যখন বালির বাঁধের বিরুদ্ধতা
আনল সুবাস অনিদ্রিত কুঞ্জলতা
তখন তুমি এমেনি ছিলে মুগ্ধমতী।
এই তো যেমন পাশেই আছি ছিলাম
দুঃখ সুখের প্রতিটি ক্ষণ মেদুর স্মৃতি,
দূরে কাছে একই মোহের যুগল গীতি;
একজীবনের ভালোবাসা তোমায় দিলাম।
জুলেখার মন
মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ
দক্ষিণের বাতায়নে আসে স্নিগ্ধ মালতীর ঘ্রাণ,
সুন্দরী জুলেখা জাগে একা রাত্রি নৈশব্দের বুকে
ঘুমের ঝরোকা তার খুলে দিয়ে চাঁদের আলোকে
সারা রাত কান পেতে শোনে দূর- অরণ্যের গান;
যেখানে তারার ফুল ফুল গুচ্ছবদ্ধ রয়েছে অম্লান,
দুধের মতন চাঁদ একাকীই জানালায় জ্বলে-
আকাশ-সমুদ্র থেকে সে-ও যেন মৃদু কথা বলে
জুলেখা শুনেছে আজ সেই দূর চাঁদের আহ্বান।
জ্যোৎস্নায় ভরেছে বন, তারি ঢেউ লাগে বাতায়নে,
মনের অরণ্যে তার প্রেমের সোনালি ফুল ফোটে
কে যেন একাকী এসে বলে তাকে একান্ত অস্পুটে-
অরন্যেল গন্ধ মেখে প্রেমিকের স্বপ্ন নিয়ে মনেঃ
‘প্রেমের অজস্র ফুল তুলে নেবো আমরা দু’জন’
মালতীর সুরভিতে জেগে ওঠে জুলেখার মন!
আমার চুলগুলো
মুহম্মদ নূরুল হুদা
ভন্ড প্রেমিকের চুল
না কালো না সাদা
প্রকৃত প্রেমিকের চুল
সাদা থেকে কালো হয়ে যায়।
তিরাশি বছর বয়সেও
যার চুল
কালো থাকেনা
সে প্রেমিক হয়না।
আমার চুলগুলো সাদা হতে চলেছে।
এন্টিসেপটিক চুমু
হেলাল হাফিজ
আমাকে উস্টা মেরে দিব্যি যাচ্ছো চলে,
দেখি দেখি
বাঁ পায়ের চারু নখে চোট লাগেনি তো?
ইস্! করেছো কি? বসো না লক্ষীটি,
ক্ষমার মুছে সজীব ক্ষতেই
এন্টিসেপটিক দুটো চুমু দিয়ে দেই।
আরও পড়ুন- জামিল হাদীর একগুচ্ছ কবিতা