একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা- পর্ব ১
ব্যতিক্রম হাওয়ায়
মলয়শঙ্কর দাশগুপ্ত
আমি ছুঁয়ে যাই তোমার স্বপ্ন, ব্যতিক্রম হাওয়ায়,
বলেছিলে, ইন্দ্রনীল সময় ঝ’রে পড়লে
শেষ সূর্যের রশ্মি বুকে মেখে তুমি আসবে।
রৌদ্র ভেঙে তুমি আশ্বিনের শেষ প্রহরে সূর্য ডুবে যায়,
শহরের উচ্চতম অট্টালিকার শীর্ষে এখনও তার স্মৃতিচিহ্ন!
অথচ সময় তার কথা রাখে! ভগ্নস্তুপেও তার সাক্ষ্য।
শিউলি ফুলের শরীরে শিশির, শিশিরের ঘ্রাণে ঘাস
দুলে ওঠে। বুকের মধ্যে পরবর্তী সোনালী রোদ্দুর
স্মৃতির সুবর্ণরেখা হয়ে শুয়ে থাকে,
সময় কি কথা রাখে? কিংবা তুমি?
আমি ছুঁয়ে যাই তোমার স্বপ্ন, স্মৃতি
ব্যতিক্রম হাওয়ায়।
তোমাকে যদি হারাই
দিনেশ দাশ
চাঁদ দলি গোল দুধের বাটিটি
দু দুবার উপুড় ক’রে তোমার বুকে।
সমুদ্র তার সমস্ত ফেনা
উজাড় করে দিল তোমার কোমল দেহের ওপর।
তারার রাত্রি দিল দুটি জ্বলজ্বলে তারা
তোমার চোখে।
সূর্যোদয়েল জবা তোমার ঠোঁটে
আর তোমার দেহের দীর্ঘ ছায়া কি আমি?
তোমাকে যদি হারাই
তা’হলে আমি হারাবো সমুদ্রকে
হারাবো আকাশকে
হারাবো বাতাসকে
হারাবো আমাকে।
আমি আসক্ত
রত্নেশ্বর হাজরা
পেয়েছি রক্তের গন্ধ আমি আর খুঁজবা না বকুল
দেখেছি সমস্ত দিন নৈপুণ্য অহং আর সুগন্ধহীনতা
অনেকের
প্রকৃতির দুর্বলতা হিংস্রতাও দেখেছি- এবং
দেখেছি তোমার সহিষ্ণুতা-
শুনেছি রক্তের কণ্ঠ আমি আর শুনব না গজল-
ছিলাম মুখোশ-পরা – তা সত্ত্বেও খুলে
শোণিত দিয়েছে ওষ্ঠ আমি
আর কি বৈরাগী!
গন্ধময় ফলগুলো নাভি থেকে উড়ে গিয়ে
দেখেছি আবার ফিরে এসেছে নাভিতে
উল্কাপতনের শব্দ কিংবা জলোচ্ছ্বাস ভর্তি বুক
পুরোপুরি একা
কোনো মন্ত্র নেই আর-
পুজোয় বসাতে চাইছ কেন (আমি তো পারব না)
শরীর পেয়েছি অযাচিত
আমি আর কি করে সন্ন্যাসী।
পাণিগ্রহণ
শান্তি কুমার ঘোষ
তিনি হাত তুলে নেন হাতে-
গৌরী লজ্জাভরে
পায়ে-পায়ে খুঁটতে লাগলো নখ।
কেটে গেল মেঘ-কৈলাস শিখরে।
বিবাহের রঙে রাঙালো আকাশ।
উদ্দেশে তাঁদের পানপাত্র তুলে ধ’রে
জানায় উল্লাস
অগ্নিকুণ্ড ঘিরে-ঘিরে
জানায় উল্লাস
আদিবাসী মেয়ে-পুরুষেরা,
কবি সেই সঙ্গে।
প্রিয় বন্ধুকে
কল্যাণ সেনগুপ্ত
দশটি বছর কি ক’রে কাটালে, থাক অনুক্ত থাক।
সে-সব কথার সূতো টানলেই আবার অসীম দূরে
ম্লান হবে তুমি, অচেনা লাগবে তোমার ক্লিষ্ট হাসি।
আমিও তখন হয়তো বা হতবাক,
বিপন্ন, ক্ষীণ স্বরে
বলবো ‘তাহলে আসি’।
আরও পড়ুন- আনিসুর রহমান নিপুর একগুচ্ছ কবিতা