তাহমিনা মুন্নীর কবিতা
অত:পর মানবকূলে ফিরে আসা
নিটোল জলে পদ্ম ফোটা দীঘির মৌনতা
কুঞ্জকানন সুরভিত হাস্নাহেনায় সুরঞ্জিত
অত:পর!
শুভ্রতার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায়
পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকা।
একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী
সবুজ এই অরণ্যবাস আর হবে না ফিরে দেখা।।
অনন্তকাল যে পথের দোসর
সেখানে জুই চামেলি চম্পাকলি
হাজারো নামনা জানা ফুলের সুরভিত সুবাস।
সুধারঞ্জনে আজ যা ভাল সেটাই
আগামীর প্রতিফলন।
আমি তুমি সে
একটু ভাল থাকা কাউকে ভালরাখার
পরিকল্পিত জীবনই কেবল পারে
সেই সুবাসিত পুস্পরাজির গন্ধে আগ্রাসন হতে।
অত:পর!
অনন্তকাল মানবকূলে বেঁচে থাকা
এটাই বা কম কিসের!
আঁধারের হোক জয়
আমাকে আঘাত করো,শত রুপে শতবার
রুধির শানিত ধারায়, তবু প্রেম অনিবার।
যে প্রেমে পলিত আঁখি,ভেঙে দিল যত গান
হৃদয় বিছানো পথে ,বিরহ ব্যথার দান।
কি ভুল সেধেছি আজই, ফিরিবার পথোহীন
হারিয়ে দিশা তারই,শূন্যতায় বাজে বীন।
তবুও আর চাইব না,ফিরে দেখা সেই দিন
জীবন সায়রে না হয়,মেটাবো প্রেমের ঋণ।
আমি তো বেসেছি ভালো,কষ্টের লোনাজল
ভুলে ভরা জীবনে, ব্যথা যার সম্বল।
মেঘে মেঘে বেলা যখন, পথ চলায় নির্ভয়
সব আলো নিভে যাক, আঁধারের হোক জয়।
সঞ্চয়িত ভালবাসা
ভাবছি প্রতিদিনের কথাগুলো খুচরা পয়সার মতো
তোমার হৃদয়ে সোপর্দ করতে করতে
যেদিন একটি দুই টাকার নোট হবে
সেদিন আমি সেই নোট দিয়ে এক টুকরো সুখ কিনব।
অনাগত দিনগুলোতে টুকরো টুকরো সুখ
হৃদয়ে বিকিয়ে সমূখে এগিয়ে যাব।
তোমাকে সাথে নিয়ে সেই সুখের রাজ্যে!
কিছু গোলাপের পাপড়ি বিছিয়ে
সমস্ত কাটা উপেক্ষা করে বুনব আগামীর স্বপ্ন।।
তুমি আমি আর আমাদের সুপ্ত বাসনা!!
একটি করে দিন গত হলেই
জমতে থাকবে কথার ডালি!
মৃন্ময়ী আশাগুলো বাড়তে বাড়তে
সঞ্জীবিত হবে নতুন নতুন আশা।
ভোরের শিশির সিক্ত আবেশ মেখে
প্রতীক্ষিত আগামীর প্রত্যাশায় ।
আলোকিত রৌদ্দুরে তোমার অবয়ব
আমার মনের দর্পনে শুভাশীষ।
সে আলোয় পথ চলতেই
সকল আঁধার মাড়িয়ে
এক টুকরো সুখ যেন স্বর্গীয় অনুরণন।
সেখানে লক্ষ অযুত কষ্টেরা নিমেষেই অম্লান হয়ে
এক টুকরো সুখ সমস্ত যন্ত্রণার যবনিকা টেনে
রচিত হবে তোমার আমার ভালবাসার বাগান।
যেখানে থাকবে নাম না জানা
হাজারো ফুলের সুরভিত সুবাস
থাকব তুমি আমি আর–
আমাদের সঞ্চয়িত ভালবাসা।
কবিতায় প্রণয়মালা
আমিও এক সময় কবিতা লিখতাম
একটু একটু করে ভেবে ভেবে দিনভর
বেলা পেরুলেই
যখন চারপাশে নিস্তব্ধতা
দূর হতে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শোনা যেত
ওপাশ থেকে হালকা পুষ্পাভরণ
মাতাল গন্ধ মহুয়ার
আমি উন্মেষিত প্রেমিকার প্রচ্ছদ অরুনিমায়
কালির আঁচড় মাখতাম।
আর কবিতায় তোমাকে লিখতাম।
কখনো রাত ভর জেগে থাকা
জ্যোৎস্নাময় হাসির প্রলোভিত
এক চিলতে আলোর ছটায়
কথার মালা গাঁথতাম।
আর কবিতায় তোমাকে লিখতাম।
কতবার নীল খামে আপন হাতে
আপনারে যাই লিখে
কতভাবে যতন করে সাজিয়ে বিরহ ডালা
উড়িয়ে মেঘের সাথে
কবিতায় করেছি খেলা।
আজও দিনভর উর্বশী ভাবনা
আঁধারের কোল ঘেষে
জ্যোৎস্নারা উঁকি দেয়
রাতভর সজ্জিত আলোকিত চন্দ্রিমায়
এখনো খুঁজি তোমায়
হারানো কবিতার প্রনয়মালায়।
কষ্ট নামের সুখ পাখি
কেউ যদি মোর কষ্ট নিয়ে
খেলতে চায় খেলুক তবে
এমন অনেক কষ্ট আছে
যত্নে গড়া বুকের টবে।
সুখগুলো সব অল্প আয়ুর
হিসেব করে দেয়না ধরা
নিভৃত এই বুকের কোণে
কষ্ট গুলো যত্নে গড়া।
এমন কষ্ট নুনের দামে
বেচব না তো ভবের হাটে
বলব নাতো নিরব ব্যথার
যন্ত্রণা আর ঘাটে ঘাটে।
ভালবাসার কষ্ট গুলো
রাখব পুষে যত্ন করে
পুষ্পাভরণ সজ্জিত সুর
আলতো করে মনের ঘরে।
কেউ যদি আর এসে বলে
সহজ কথায় ভুলিয়ে ভালে
কষ্ট শাখের গুঞ্জরিতে
ফুটাবো ফুল তোমার ডালে।
তবুও আমি এই জনমে
বেচব নাতো কষ্ট গুলো
আলো আঁধারের পথ চলাতে
একটু না হয় নামুক ধুলো।
আমি না হয় পত্র পাতায়
একটু সুখের গন্ধ নিলাম
একান্ত এই কষ্ট আমার
মেঘের খেয়ায় ভাসিয়ে দিলাম।
কষ্ট নামের সুখ পাখিটা
সাতকাহন এই চোখের তারায়
বেচব নাতো কারো কাছে
রাখব ধরে নিরব মায়ায়।
আরও পড়ুন- চিঠি- মুক্তগদ্য