প্রচ্ছদসাহিত্য

নকিব মুকশির কবিতা

ব্রোথেলের নিচে

এ জীবন এমন—যেন শীতের

পর্ণমোচীবন

যেন দাবানলে এক শালবিথার…

 

চিরহরিৎ কণ্ঠ হারালে প্রান্তরে

ব্রোথেলের নিচে

জমা রাখি গান…

 

ডুবরি নেই—

 

বসন্তের রাজবেশের সুরসম্ভবার

পলায়নপর পতিত জীবন দেখে

তবু চাই যেন থাকি

সেই কস্তুরি বরাবর—

 

বেলি ও গ্র্যান্ডমাস্টার—-

ঘুটঘুটে সুন্দরের

পাল তুলে এলে হৃদয়ের পাড়ে

ব্রেকআপ ভাঙে—

নো সই, ডিভোর্স পত্রে

তাইলে আবার চলো পরস্পর নিই

হৃদয়ের ঘ্রাণ

গন্ধবণিকের নাকে

সাতটি রঙের শানে সাতটি শপথ

এতটা সহজ ভাঙা!

এ মিশ্রণ কি তেমন

সিগারেটের সে ধোঁয়া, ফুঁ দিলেই

ছিঁড়ে যাবে হৃদয়ের আল!

নিজের চেয়েও বেশি সত্যি ভালোবাসি

এটা কী, কী রূপ তার?

ফসল ফলিয়ে ধান খড় হয় খেতে

এটা তেমনই প্রেম

বজ্রপাতে জ্বলে যাব আমি তালগাছ—

 

ফলদ মাঠের চুপ

ভেঙে ভেঙে করে যাব হৃদয়ের সংকলন

গৌড়ীয় আমেজে

চিহ্ন রেখে দেব খুব, যেন জন্মদাগ

পৃথিবীর কেমিক্যাল

ডিটারজেন্টের শক্তি

ব্যর্থ হয়ে যাবে ধীরে আমাদের প্রেমে

 

দুই জোড়া ঠোঁটে যেই নামে অনুপ্রাস,

শরিয়ত শরিয়ত বলে

ভুলে যাই মারফতি বৃষ্টির সেতার

হৃদয়ের প্রেসে ছাপি

মেঘনা-পদ্মার সন্ধি—মোহনার কুঁড়ি

 

পৃথিবীর একবার হয়েছিল রোগ—

গাঢ় অ্যালঝেইমার

তখনো ঠিকই ছিল আমাদের বাঁশি

শ্রুত পাখোয়াজি প্রেম—অ্যান্টিবায়োটিক

ভুলে যাওয়া কী যে হাজত-রিমান্ড

আজ বুঝি খুব

স্মৃতির ভাঁড়ার শূন্য, সাদা পাতা শুধু

হৃদয়ের পটে জমা

ডেউয়া রঙের সুর!

 

রাশিয়ান ঋষি আজ ফুটেছে বাগানে

যেন নীল জমিনের মালিক আমরা

সে সম্রাট আকবর

মাটির ভাস্কর্য আজ—দ্বিপ্রহর-বিচ্ছেদ…

 

শূন্য থাকে না যে খালি, তা তো জানো ভালো

ঝড়ের ঘোড়ারা এসে

পোকাধরা ফল পাড়ে

পূর্ণ করে তোলে স্থান—কুস্তি হয় গাঢ়

ধুতরা ফুলের দেহী সানাই বাজিয়ে

 

হয়তো করবে মত্ত—

অথচ রিজার্ভ বুঝি আজ ব্ড্ড ফাঁকা

প্রেমের জমিন রুগ্‌ণ!

 

তা সত্ত্বেও আমরা চাই প্রত্যেকেই হব

ছড়ানো ফাঁকার মাঝে লটকানো স্তনে

জীবনের কোর্টে সেই সে গ্র্যান্ডমাস্টার!

 

তবে আমি যেন হেরে

ছুটে পড়ি মাঠের বাইরে

এতে যেন হয়ে যাও

মারিয়াম নুর—বেলি ও গ্র্যান্ডমাস্টার

 

অমৌসুমি আমি

নিজেকেই ছিলে ছিলে করে যাব সংকলন

হরিণবাঁশির হিস্ট্রি

গৌড়ীয় আমেজে

জন্ম দেবে, জন্ম দেব

নতুন নতুন কৃষ্টি…

 

পানের স্তবক

যেভাবে আবিষ্ট হয়ে পুঞ্জিতে সন্ধ্যায়

পানের স্তবক বাঁধে খাসিয়া তরুণী,

সেভাবে জড়াবে তুমি ধলাপেট বক

প্রজাপতি অর্কিডের মায়া ভরা রূপে?

নুয়ে যাব তবে আমি ধীরে অতি ধীরে…

 

ভোটের তোরঙ্গ লুট হয়ে যায় দেখি,

শুধু লুট হই না যে আমি, পড়ে থাকি

তোমার পায়ের ধুলা যেভাবে ‍লুটায়

সেভাবে পথের পথে; হৃদয় তোমার

সেসব গুঁড়িয়ে যায়, তবু হাঁসে মরি…

 

 

বেলির কারায়

জলে ভেসে ভেসে যত গহিনে হারাই

পেয়ে যাই তত তলে হ্যাজেলের গন্ধ

ধবধবে চুলের মতো আফিমি হৃদয়

আমায় রাজবন্দী করো বেলির কারায়

তোমার আঁধার চুষে হতে চাই পদ্য…

 

ট্রেনের চলার ছন্দে মানিপ্ল্যান্ট দোলে

আর চুপিচুপি দেখি তুমি যাচ্ছ ডাকে

সাপের গোলাপি ডিম হয়ে পড়ে আছ

স্মৃতির উত্তল চেরি, যেভাবে ধনেশ

মা হওয়ার পর ভাঙা নীড় পড়ে থাকে

 

নকিব মুকশি: তালতলা, ঢাকা। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: প্রতিশিসে অর্ধজিরাফ, জেব্রাক্রসিং প্রকাশন, ২০১৯…দুধের গাই—এজমালি বাগান…, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন, ২০২০ জুতার কিরণ, অনুপ্রাণন প্রকাশন, ২০২১। প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, এক্সিলেন্ট আইডিয়াল স্কুল। দৈনিক প্রথম আলোতে কর্মরত।

 

আরও পড়ুন- রায়ান নূরের কবিতা

error: Content is protected !!