প্রচ্ছদসাহিত্য

নাসরিন আক্তার এর কবিতা

কোন এক বীরাঙ্গনার আর্তনাদ

আকাশ ছিল ঘুমন্ত পরীর ডানায় ঢাকা

অন্ধকারে মেঘের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে

হিম হয়েছিল বাতাস।

আর আমি ছিলাম মত্ত বর্বরের হুইস্কির গ্লাসে

ঘুম ঘুম চোখে প্রকৃতি তখন কুায়াশার লেপে ঢাকা।

তারপর কোন এক রাত চিরে

কেঁদে ওঠে একটি শিশু!

কঠিন আত্মচিৎকারে জানায় আগমনী বার্তা।

 

কাঁদে জনকহীন শিশুর জননী

নষ্ট প্রজননে অনুপুষ্ট শিশুটি চায় অধিকার

নির্ভিক,নির্ভয় একান্ত উষ্ণতায় পূর্ণ।

দিগন্ত জোড়া মায়ের দুচোখে কেবলই বিস্ময়!

মনের গভীরে ভেসে আসে হাজার প্রশ্ন–

একি আমার গর্ভজাত শুভ্র কালি?

কেন অর্থযুক্ত কবিতা  নিস্তরঙ্গ জনপদে

কেবল লেপ্টে দিচ্ছো অনন্তকালের কালো কালিমায়?

বাস্তবের ক্যামোফ্লেজে শেষ টোকা দেবার আগে

জনতা ভাবে নি,ভাববে না

গ্রন্থিবিহীন এই ভ্রুণ আমি শুধু ধারণ করেছি

বিস্মরণের ট্রেনে চড়ে

অসম্ভব অনিচ্ছায়,বিতৃষ্ণায়!

এবীজ আমার ভেতর বপন করলো যে

তাকে আর পাবো না!

অবচেতনের গণিতে গোঁজামিল দিতে দিতে

সেবিতাড়িত হয়েছে বাংলার মানচিত্র থেকে।

আমাকে দিয়ে গেছে শ্যাম্পেনের গ্লাসে

উপচানো একগুচ্ছ ফেনা!

সেই ফেনা থেকে ভ্রুণ আর

সেই ভ্রুণ থেকে এই অবাঞ্ছিত।

চেতনার আগুনে পোড়ে ঘুমন্ত পরীর ডানা

ফুলে ফুলে ওঠি মেঘের ঠোঁট…….

হুইসেল বাজে হুইস্কির গ্লাসে।

অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে পুরুষ হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা,

ইজ্জত, নারীত্ব দিয়ে যুদ্ধ করে

আমি তবে কি পেলাম?

নষ্টালজিয়ার নষ্টামিতে অন্ধকারের এই ভ্রুণে কি

তবে জন্ম নিল মোড়কের শেষ জারজ!

 

 

ফিরে এসো

সেই চিতার আগুন দেখতে দেখতে

বিস্মরণের যে আয়োজন দেখতে পাই

তার শেষ সোপান দাঁড়িয়ে

আজ তোমাকে বলছি-হেলায় হারালে সময়!

আলো নিভে গেলে

অশ্রুপাত তোমার দু’চোখে মিছিল করবে

অসহায় ধারাপাত বার বার ভুল অংক কষবে

অস্থির দু’হাত জড়াতে চাইবে অনুভব!

নিরাশায় মন হারাবে স্নিগ্ধতার পথ!

সময় হারালে হাসির শ্লোগানে অনশন শুরু হবে!

ফিরে এসো,বার বার বলছি-

প্রকৃতির নিশ্বর্গে ভালোবাসা চুম্বন করে ফিরে এসো

দেখো এসে কতটা রঙিন আলোয়

সাজানো আয়োজন–

ছন্দময় প্রেমের আলিঙ্গনে সুখের পাহাড়।

শুধু তোমার জন্যে।

 

 

সোনালী কবিতা

নির্ভাজ হৃদয়ের কোমল ভাঁজে

অপেক্ষা করে সোনালী স্বপ্নের কবিতা,

অনুভবের সুবর্ণ সোপান বেয়ে

হেঁটে আসে তোমার ব্যাকুল আকুতি,

বসে থাকা সার্থক হয়

যখন এলোমেলো বাতাস সুবাসিত হয়

তোমার লোমশ বুকের মাতাল গন্ধে।

কুয়াশায় চাদরে উষ্ণতা বাড়ে,

শিশির চুমে যায় ঘাসের নরম অধর,

শিউলিকাতর চোখ পথের জমিনে

বিছিয়ে দেয় অপেক্ষার ব্যাকুলতা,

উৎকন্ঠার মিছিল এসে থেমে যায়

চাওয়া ও পাওয়ার ব্যবচ্ছেদে।

বিষন্ন মায়ারা লাবণ্য খোঁজে প্রাপ্তির সম্ভাবনায়।

সকল আয়োজন সার্থক হয়

নিসর্গের বর্ণিল শব্দেরা যখন

আত্মসমর্পণের উদাসী গানে তোমাকে পায়!

 

আরও পড়ুন- নোমান শায়েরীর কবিতা

error: Content is protected !!