নোমান শায়েরীর কবিতা
প্রভূর খেলা
মহাবিশ্বের মহাপ্রভু
মহাবিশ্ব করে সৃজন
আরশ কুরসিতে বসে করছেন খেলা।
খেলার সামগ্রী সৃজিলেন জলে-স্থলে
কতপ্রাণী দিনরাত করে বিচরণ।
কতপ্রাণী কত প্রাণ নিত্য করে নাশ
কতপ্রাণী কত প্রাণ করে জন্মদান।
নানা রঙে নানা প্রাণী সৃজিলেন তিনি।
মনে তবু রয়ে গেল বিপুল অপূর্ণতা;
শ্রেষ্ঠ প্রাণী রুপে সৃজিলেন মানুষ।
কতরূপ দিয়ে তারে, বুদ্ধি-বিবেক দিয়ে
কতজাতে কত ধর্মে করে বিভাজন
পাঠালেন বিশ্বপ্রভু এই দুনিয়ায়।
বিশ্বপ্রভু একজন সত্য নিরঞ্জন;
কেউ বলে আল্লাহ, কেউ ভগবান
কেউ বলে রাম তাঁরে, কেউ ইশ্বর।
আপন প্রয়োজনে করে আবিষ্কার
কাটায় জীবন মানব এই দুনিয়ার;
অবশেষে ডেকে যায় মরণ তাকে।
এইভাবে কত মানব, কত প্রাণী
আসে পৃথিবীতে,কাটায় কিছুকাল
আবার চলে যায়….
এইহল প্রভুর খেলা।
মহাবিশ্বের মহাপ্রভু
মহাবিশ্ব করে সৃজন
ধ্বংসিবেন আবার তা; একি ভাঙা-গড়া?
জানি না কি আছে এতে
কী সুখ? কী আনন্দ?
জানে মহাপ্রভু।
যারা মানবরূপে
পৃথিবীতে যত মানব সকলে সমান
সাদা কিবা কালো আর ধনী কিবা গরিব
কারো প্রতি করো না এতটুকু হেলা।
প্রভুর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি সে এই মানব
কত রঙে কত জাতে ধরায় বসবাস।
রবের সব দান সকলেই পায়
কারো প্রতি তাঁর কোন হিংসা-বিদ্বেষ নাই।
কেবলি ক্ষুদ্র মানব আপন দম্ভে
মানবের মাঝে করে নানা ভেদজ্ঞান।
বলহে মানব! বল দেখি তুমি,
এধন এ বর্ণ কে দিলো তোমায়?
এধন তোমার নয়, প্রভুর মহাদান।
গড়ো দেখি এমন বর্ণ নিজ হাতে তুমি!
সেই প্রভুর আদেশ কর গ্রহণ
ব্রত নাও মানব সেবার ভুলে হিংসা যত।
যুগে যুগে এলো গেল কত মহামানব
স্বার্থক করে গেল তারা দু’জনম……
মানব সেবায়।
যারা মানবরূপে জন্মে এ ধরায়
মানবের মাঝে করে নানা ভেদজ্ঞান
তারা কিসের জাত নির্ণয়ে ভেবে না পাই।
ধর্মে-বর্ণে যাদের হিংসা আছে মনে
তারা করুক গিয়ে অরণ্যেতে বাস।
ভূ-পৃষ্ঠের কথা
বিশাল এ পৃথিবী, কী বিচিত্র রঙ তার!
হতবাক চোখ দু’টো বারবার চায়।
যতবার যতভাবে দেখি এ বিশ্বকে
মনটা যে যাচে আরো
কভূ স্বাদ মেটে না।
কোথাও সমতল ভূমি,কোথাও অসমতল।
কোথাও ঊর্বর, কোথাও বা অনুর্বর।
বিশাল এ পৃথিবী, অনাবৃষ্টি কোথাও
কোথাও তূষারপাত চলে দিনরাত।
কত পাহাড়-পর্বত, গিরি-গুহা উপত্যকা
পৃথিবীর এই বুকে অনাদিকাল ভাসা।
কোথাও ঝর্ণা ঝরে,
কোথাও থেকে নেমে আসে শক্ত পাথর।
পৃথিবীর এই বুকে
কত গাছ-তরুলতা, কত বন-উপবন;
কতরূপে উপকার করে নিরবে।
কত রূপ ফুল ফোটে
কত রূপ ফল দেয়;
সবচেয়ে বিস্ময় দিতেছে নিঃশ্বাস।
এখানে ওখানে দেখো স্তব্ধ সরোবর
খাল-বিল-ঝিল আর হাওর-বাওড়;
ছোট বড় কত নদী চলে এঁকেবেঁকে।
বিশাল এই পৃথিবী,
কতসাগর-মহাসাগর ঘিরে আছে তাকে।
তার মাঝে রয় দেখো কত দ্বীপ উপদ্বীপ;
সেখানেও দিন আসে,রাত আসে
প্রাণীর বসবাস।
বিশাল এ পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের রূপ
কোন ভূমি নরক আবার ভূ-স্বর্গ কোথাও।
সৃষ্ট এ বিশাল ভূমি, অপরূপ রূপ তার
দিয়েছে রূপকার।
আরও পড়ুন- তাহমিনা মুন্নীর কবিতা