প্রচ্ছদসাহিত্য

সুপ্রভাত মেট্যা- একগুচ্ছ কবিতা

খুশির হাওয়া

শূণ্যতার মৃত্যু বলে কিছু নেই, জন্মও নেই।

অতীত অনন্ত সত্য সংখ্যাবিহীন সে স্তব্ধবাক!

আত্মকথা লিখে যাওয়া জীবনীবিন্যাস ঐশ্বর্যস্বরূপ। রূপের ভাস্কর্য নিপুণ শরীর সহজ কথা বলেনা।

লাবণ্য ছড়ানো আলো ধুলো তৈরী করে, সে জটলা করে পথ। লক্ষ্যে পৌঁছায় অত্যন্ত কষ্টে, অতীব ধীরে ….

চলে যাওয়া,

থেকে যাওয়ার চাইতে ভালো হলে

সেই পথ ধুলোর নয়; রঙিন আলোর দিন হয়ে ওঠে।

বাড়ি ভর্তি খুশির হাওয়া ফিরিয়ে নিয়ে আসে ভোর ।

ভাতের কথা বলতে বলতে

চলে গেছো ধরেই থেকে যাও না?

ধরে নাও না ,নেই-দেশের রাজ্যে তুমি থেকেও নেই আজ।

এইঅসমাপ্ত জীবন, শূন্যতাকে ঘিরে তুমি কার কাছে চাইবে কবিতা, বলো?

আর যখন না-ই বলেছে, কি হবে তাঁকে চেয়ে ?

 

জানো,আমাকে ভাতের কথা বলতে বলতে, লেগে যাওয়া ক্ষুধার

আড়ালে কারা যেন আগুন লাগিয়ে চলে গেছে?

যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আমার উদর, পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে।

কই কিছু বলছ না যে?

“কি আর বলব,” মানে?

জানোনা আলো এলে, আলো নিভিয়ে দিতে হয় ?

তানা হলে ভালো হওয়ার কাগজ-কলম বিশেষে কবিতা

লিখে তাঁর কাছে কী পৌঁছানো যায়? তিনিই সত্য। তিনিই তো অনন্ত।

জন্মেই এক-একটি অন্ধকার,মানুষের চক্ষু ছাড়িয়ে, স্বচ্ছ হৃদয়ের আলো পেরিয়ে,

পৌঁছে যায় মস্তিষ্কের তীক্ষ্ম প্রদেশে যখন, গায়ে তার ধ্বংসের উগ্র পদরেখা,

অগ্নিবলয়ের ঘোর রাত্রি লেগে আছে দেখে, ঈশ্বরও মন্দির ছেড়ে পথে নেমে আসেন,

আর বলেেন, এ-দেশও আমার নয়, এ-পৃথিবীও নয়।

 

বরফ ঠাণ্ডা মন

ভঙ্গ সে বিশ্বাসের সঙ্গে

বঙ্গভঙ্গ, যেভাবে লতিয়ে আলাদা করে রাখে

আমাদের জলকেলির শান্ত পুকুর,

আমি সেই চক্ষু,তার অশ্রু সাম্রাজ্যে

আজও দুঃখে বিভোর হয়ে থাকি, ক্লান্ত বিছানায়।

আমাকে গল্প করে টুকরো,

প্লেটে প্লেটে সাজিয়ে দেয় দেশের লোকেরা।

খবর করে খায়, আমার গায়ের নরম অন্ধকার সব, নীরব, একান্ত  গুহায়।

লবন এবং লঙ্কাগুঁড়োয় লাল করে তোলে তারা, আমার ক্ষতের জ্বলন ও যন্ত্রণা যত ।

আমি অসহ্যের অন্তিম রহস্যে গিয়ে  অরণ্যের শিকার হই কখনও-সখনও।

জ্বরভাবের শরীর নিয়ে কম্প হই কী ভীষণ!

প্রচন্ড ঘোরে মায়ের হাতের জলপট্টি খুঁজি আর বরফ ঠাণ্ডা একটা মন খুঁজি ,ভেতরে গভীর।

 

তাদের শরীর বলতে ঠিক কী

ঠাণ্ডা লেগে আলো ক্রমশ হালকা হয়ে গিয়ে

অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে ।

পূবদিকের সকাল ক্রমশ পশ্চিম-বিকেলে ক্লান্ত ঢলে পড়ছে; যেন শিশু, যেন কিশোর ….

আঁটোসাটো রোদ, গোলাপ আঁকা কাপড়ের

প্রেমকাহিনী হলুদ পাড়ের ছবিতে ক্রমশ আলগা হচ্ছে যেন !

রাত্রিঘন কালো অন্ধকারে ,কোথাও

যুবকসমাজ ফুলে-ফেঁপে উঠছে।

তাদের শরীর বলতে ঠিক কী,কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা !

কঙ্কালসার,কলঙ্কের ক্ষয়ে যাওয়া মাংসপেশী,

পাঁজরের ঝনঝনে আওয়াজ সমৃদ্ধ যেন কোনও

মৃত্যুনিবাসী অদৃশ্য পরম্পরার স্রোতে ,

তাদের শুধুই বয়ে যাওয়া ।

 

আরও পড়ুন- সেঁজুতি জাহানের কবিতা

error: Content is protected !!