আঁচল- শাশ্বত বোসের গল্প

Mostafizur Rahman
Mostafizur Rahman

Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.

“তুর গতর টোয় আর আগের মত মজ নাই রে, দিখলে খিদা লাগেক লাই বটে|”

ডগরের দড়ি পাকানো, বিবস্ত্র দেহ টাকে, বিছানায় একপাশে ফেলে, গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পরে “দেবু সারেন”| তাঁর বলিষ্ঠ সুঠাম দেহে, কাষ্ঠল পেশীগুলো ক্রমশঃ ফুটে উঠতে থাকে, যেন মদন মোহন মন্দিরের গায়ে, বিষ্ণুপুরী টেরাকোটা ভাস্কর্য| ডগর তখনও পরে থাকে একে বেঁকে, যেন আস্ত একটা কালাচ সাপ, ঘন শীতের, অপাংক্তেয় সূর্য্যের আলো থেকে সরে গিয়ে, কুন্ডলী পাকিয়ে চলে গেছে, মোক্ষম এক শীত ঘুমে| দেবু সম্পর্কে ডগরের ভাসুর হয়| ওর মরদটা পাগল হয়ে ঘর ছেড়েছে বছর দশেক হলো|

শেষবার পাড়ার লোকে জঙ্গলে যেতে দেখেছিল| সময়টা দিন আর সন্ধ্যের মাঝামাঝি| সমস্ত জঙ্গল জুড়ে তখন রং লেগেছে| মেরুদন্ড বেয়ে, শব্দ তোলা চরম শ্বাসে, বড় বড় পলাশ গাছগুলোতে, আকাশ কুসুম দোল দিচ্ছে| ঠিক যেরকম একদিন, দোলায় চেপে, মরদের হাত ধরে, দুলতে দুলতে, ডগর শ্বশুর বাড়ি এসেছিল, দলমা র শরীরের, যাযাবরী মজ্জার পার্বত্যপথ পেরিয়ে| সেও ছিল, কোন এক জন্মান্তরের সময়, শীতের শেষ, বসন্তের শুরু| মরদ টা ছেড়ে যাবার পর থেকেই, ডগর দেবুর সাথে শোয়, দেবুই ওকে ডেকেছিল একদিন| লোভী পায়ে এগিয়ে গিয়ে, প্রায় লোহা হয়ে যাওয়া শরীরের, বিবর বেয়ে চুঁয়ে পরা, মসৃণ স্বেদ চেটে নিয়েছিল ডগর, তার শ্রীহীন জিভ টা দিয়ে| যৌবনের অমেধ্য কাঁটা তারে, কৃষ্ণবেনী এক সাঁওতাল তরুণীর, অনতিক্রম্য মেয়েলী লাবণ্য, পিষে গিয়েছিল, দেবুর ভীমসম, উষ্ণ মর্দনে| অথচ প্রথমে, দেবু ডগরকে, নিজের ছোট ভাইয়ের বৌয়ের চোখেই দেখত| এ যেন এক নির্বাণী অজাচার|

জঙ্গলে পূর্ণিমা হলে, যেমন রাতের শেষ টুকু, ডুব দেয় গর্ভবতী কাঁসাইয়ের কোলে, সেইরকম বাসি শরীরের, এঁটো অতৃপ্তি নিয়ে, দেবুর বিছানা ছেড়ে উঠে পরে ডগর| এবেলা জঙ্গলে যেতে হবে, মহুয়া ফুল কুড়োতে| এইসব করেই, দুবেলা খাবার জোটে ওদের, এই অবাধ, দুয়ারে সরকারি সুবিধার, নশ্বর দুনিয়াতেও| “ডগর সারেন” ঠিক কবে, এই আপাদমস্তক সাঁওতালী লাল পেরে, শাড়ী জড়ানো, শুশুনিয়ার কোলে, দাঁত বের করে হাসতে থাকা, কালো কুচকুচে শিউলিবনায় এসেছিল, তা আর তার মনে পরে না| তখন সে বছর ষোলোর “ছুড়ি”| বিয়ের পর, মরদের সাথে সে জঙ্গলে যেত, পাতা কুড়োতে, সাথে কুড়াত “মহুল” ফুল| বাড়িতে এনে, হাঁড়ির জলে খেঁজুর পাতা দিয়ে ভিজিয়ে, তাতে পচ ধরলে, কুড়োনো শুকনো পাতা আর ডাল জ্বালিয়ে, গনগনে আঁচে জ্বাল দিত, যতক্ষন না অবধি মারটা গাঢ় হয়| এই গন্ধটায় নেশা ধরে যায়| আশে পাশের জঙ্গল থেকে ভাল্লুক বেরিয়ে আসে কখনো|

গন্ধটার সাথে ডগরের ভালোবাসা হয়ে গেছিল| এরকম ভালোবাসা হয়ত তার মরদের সাথেও ছিল না| মরদটা তার চিরকালই একটু বেখেয়ালে| হাঁড়িয়া বানাত কখনো কখনো, কখনো দিশি মদ| তারপর সেই মহুয়া-হাড়িয়া-চোলাই, বড় হাড়ি করে চালান দিত, আশেপাশের গ্রামে| বসন্তের শেষ রোদ তখন, তেরছা হয়ে পরে, মিলিয়ে যেতে চাইছে, শাল সেগুনের ছায়াটার সাথে| গোল করে ছড়িয়ে পড়া রোদটা, যেন ডগরেরই মত, সিঁদুরে রঙের আঁকিবুকি আঁকত, ওদের বাড়ির দেওয়ালে,উঠোন জুড়ে, যেমনটা ডগর দিত “বাঁদনা” পরবের দিন| কার্তিকের অমাবস্যায়, জঙ্গলটার যেন রূপ খোলে| যেন জঙ্গলেতে আরেক ডগর, অনেক ডগর, ওরা সবাই কালো|

পলাশের দিনে, ডগর ঝুমুর নাচত| ওর মরদ মাদল বাজাত| দেবু আর বাকি মুরুব্বিরা, দূরে বসে দেখত আর হাসি তামাশা করত| ওর পেলব শরীরের বর্গক্ষেত্রের ভাঁজে, যেন লুকিয়ে ছিল সাক্ষাৎ মরণ, ওর মরদের মরণ| জঙ্গলে গিয়ে “ভুলাকন্যা” মাড়িয়েছিল নির্ঘাৎ| সে গাছ মাড়ালে, আর কেউ ফেরে না| যমের মতো টেনে নিয়ে যায়, জংলী রাস্তার বাঁকে| ঘন জঙ্গলে, উঁচু উঁচু গাছের শরীর বেয়ে, গড়িয়ে আসা রোদ আর হিমেল কুয়াশার সর, তাকে ডাকে, পথ হারিয়ে মাথা কুরে মরে সারা জীবন| তারপর একদিন যখন, শরীরে আর জোর থাকে না,বাঘ কিংবা হায়নায় ছিড়ে খায়| হয়তো ওর মরদেরও এই হাল হয়েছিল| ডগর খোঁজ করেছিল কিনতু বেশী তদ্বির করতে পারেনি| লুকিয়ে চোলাই হাড়িয়া সাপ্লাই করে যারা,তারা হঠাৎ একদিন, জঙ্গলের চৌরাস্তায় মিশে গেলে, বেশী দৌড়ঝাঁপ করতে নেই|

দেবুর পাশ থেকে উঠে, আজ আবার জঙ্গলে গেল ডগর সারেন| হয়ত বা আজ তার হারিয়ে যাবার পালা| জঙ্গল কি তাকে নেবে? সতী হবার কোন সাধ, আর তার নেই| বরং তার দেহের এই, স্বার্থপর যৌনলিপ্সা মেটানোর, আক্ষরিক চেষ্টার সাক্ষী থাকে, এই গোলার্ধের, নৈসর্গিক অন্ধকারের প্রতি অমনোযোগী, সূর্য্যশোক| জঙ্গলে ঢোকার মুখে তার সাথে দেখা হয়ে যায় “মাগলা” খুড়ার| বুড়া তখন, ক্ষেতের আলে ধুনি জ্বালিয়ে, ধেড়ে ইঁদুর ধরছে| পিছনে তার মস্ত ঝুড়িটা হাওয়ায় দোল খায়| ডগরের বিগত যৌবনা শরীরের, সমস্ত আকাঙ্খা, ক্রোধ, সমবেদনা, সব জাগতিক অনুভূতিগুলো থেকে, পিছলে আসা রোদের, অতিবেগুনী রশ্মি টাকে, বুড়া যেন চাপা দিয়ে রেখেছে, ওর এই ঝুড়িটা দিয়ে| ফাঁক থেকে উঁকি মেরে, ডগরের সাথে অহরহ, “কানা মাছি” খেলে চলেছে ওরা| বুড়া আগে ভালো “ছৌ” নাচত| নাচতে নাচতে, শূন্যে উঠে, লাফ দিয়ে ঘুরপাক খেত| সে সময়ে পৃথিবীর গতি, স্তব্ধ হয়ে যেতে দেখেছে ডগর| একদিন পরে গিয়ে বুড়ার ঠ্যাং ভাঙলো, নাচ ছেড়ে বুড়াও এখন হাড়িয়া বেঁচে|

জঙ্গলের শুরুতে গাছপালা অল্প| যুবতীর শরীর হাতড়ালে, সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে, জঙ্গলও তাই| ঘন থেকে গাঢ় হয় ক্রমশঃ| শেষ আলোটার মুখে, লেগে থাকে অন্ধকারের এঁটো| ছোট ছোঁড়া দুটোও আজ সঙ্গে এলো| ভুলিয়ে ঘরে রেখে আসা গেলো না কিছুতেই| মায়ের সাথে হাত লাগিয়ে, শুকনো পাতা মুঠো করে কুড়িয়ে, চুপড়িতে ভরতে লাগলো| কিছুদূর গেলেই মহুয়া গাছ| ছোট ছোট ঝড়িয়া ঘাসের পথরেখা, গায়ের রোমকূপ ঢেকেছে, লাল পলাশের কাঁচুলিতে| ছেলেগুলো নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করতে থাকে, “বেশী দাঁত টো বিগলাইস না, মারিকে তুর দাঁত গুলা ঝরিং দিব|”
আধখানা কাস্তের মতো পিছনে বেঁকে, ধমক দিয়ে ওঠে ডগর, “এই ছোড়া, ঝামেলাটো পাকাইনছিস কেনে রে? চোপার বারি দিয়া কান টো কাটাইন ফিলে দিব|”
ছেলেদুটো আবার চুপ করে যায়| বাইরে থেকে নিদ্রাবিলাসী জঙ্গলের বুক চিরে “ঝুমুর” গান ভেসে আসে|

“ঝুমুর নাচে ডুমুর গাছে ঘুঙুর বেঁধে গায় (লো)|
নাচন দুজন মাদল, বাঁশি, নুপুর নিয়ে আয় (লো)|”

গাছপালা-মাঠ-প্রান্তর ছাড়িয়ে, একটা অদ্ভুৎ গন্ধ ভেসে এসে, ডগরের নাক দিয়ে ঢুকে, উরোজে সজোরে টোকা মারে| গন্ধটা ওর বিয়ের দিনের গন্ধ| দূরের বনবীথি আর গন্ধটার মাঝে, এখন শুধু ও আর ওর আত্মজ| পাশের গাছটা দিয়ে, একটা কাঠবেড়ালি, একটা মহুয়া ফল মুখে করে নিয়ে দৌড়ে যায়, একটু থেমে ভেংচি কাটে| জটিল অববাহিকা বেয়ে, দূরে একটা “বৌ কথা কও” ডেকে ওঠে| ধোঁয়ায় কুন্ডলি পাকিয়ে, হাতির ডাক ভেসে আসে| এ দিকটায় এখন, দলমা থেকে, হাতির পাল নেমে আসে| ক্ষেতে ঢুকে যায়, ফসল নষ্ট করে, বাড়ি ঘর দোর ভেঙে দেয়| ছেলেগুলো ভয়ে ডগরকে ঘেঁষে দাঁড়ায়| অল্প এগিয়ে থমকে যায় ডগরও| সামনের জমিতে স্তুপ করে কিছু ওষুধ পরে| সাথে বেলুন, সাদা রঙের| এরকমটা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেয়, ডগর চিনতে পারে| সামনে বেশ কিছু সিরিঞ্জ পরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে| এগুলোও ডগর চেনে| অজানা বিপদের আশংকায় বুক কাঁপে ওর| দু পা পিছিয়ে আসে| হঠাৎ পেছন থেকে দুটো ছায়ামূর্তি, ঝাঁপিয়ে পরে ওর ওপর| ওর কয়েকদিনের ঠিক করে না খেতে পাওয়া শরীর টা নিয়ে, ডগর আছড়ে পরে মাটির ওপর| ওর ওপরে লোক দুটো, টেনে হিঁচড়ে ওর কাপড় খুলতে চায়| ওরা যেন এখন জংলী চিতার থেকেও হিংস্র| একটা লোক ডহরের হাতদুটো চেপে ধরে| অন্য লোকটা ওর ওপর শুয়ে পরে, ওর কান গলা বরাবর দাঁত ঘষতে থাকে| ডগরের ছেলেগুলো, দূরের শালগাছটার আড়ালে লুকিয়েছে তখন| হঠাৎই ওর নিজের ছেলেদের কথা মনে পরে| সারা শরীর জুড়ে ওর, এক নিদারুন ত্রিভঙ্গী ভোল্টেজ খেলে যায়| এক ঝটকায় ওর ওপরের লোকটাকে সরিয়ে, কোমরে লুকানো হাঁসুলী টা বার করে ডগর, মাথার উপর তুলে ঘোরাতে থাকে| দাঁত মুখ খিচিয়ে, সমাপনী তীব্রতায় ছুটে যায়, লোকগুলোর দিকে| দীক্ষিত পৃথিবীর বুকে, শ্লথ গতিতে জমা, পাপ স্খলনের লক্ষ্যে বৃষ্টি নামে| সোঁদা মাটির, জংলী বাসন্তিক আঘ্রাণে, উলঙ্গ গাছেরা নৃত্য শুরু করে| লোকদুটো পালাতে, ছেলেদুটো ছুটে এসে ডগরকে জড়িয়ে ধরে| ডগর তার পরনের ছিন্ন বস্ত্র খন্ডের “আঁচল”, মেলে ধরে ওদের মাথায়| অসময়ের বৃষ্টিতে, ওর ছোড়া গুলোর অসুখ করতে পারে|
জঙ্গল ছিড়ে বেরিয়ে আসে, একটা মাঝারি হাতির পাল| এতক্ষন ভাবা গেছিল, নিদাঘ ধরিত্রীর বুকে, দুধ এনে দেবে, আপোষহীন বৃষ্টিটা| কিন্তু এবার সেটা ওদেরও, একটা নিশ্চিন্ত আশ্রয় খুঁজে পাবার, তাগিদ হয়ে দাঁড়িয়েছে| ওদের দলের সব থেকে ছোট বাচ্চাটা, ওর মায়ের পেটের তলায় ঢুকে হাটছে| ওদের সবার এখন একটা আঁচল দরকার| দলবদ্ধভাবে একটা নিষ্কাম আচ্ছাদন আজ বড় প্রয়োজন|

 

Mostafizur Rahman
Mostafizur Rahman

Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top