বিষাদ সিন্ধু বই রিভিউ
বই: বিষাদ সিন্ধু
মূল: মীর মোশাররফ হোসেন
সম্পাদনায়: প্রফেসর ড. এন এ কামরুল আহসান
ধরণ: চিরায়ত উপন্যাস
প্রকাশণী: বীকন প্রকাশনী
প্রচ্ছদ: কে এম এ এইচ বাকিবিল্লাহ
মোট পৃষ্ঠা: ৩৫২
মূল্য: ৪০০
কালজয়ী মহান সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত ভারতবর্ষের নদীয়া জেলার (বর্তমান কুষ্টিয়া) কুমারখালী থানার লাহিনীপাড়া গ্রামে। তাঁর গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে গড়াই নদী। তিনি তাঁর মাতুলালয়য়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন একজন জমিদার। রাজকার্যে যোগ্যতা ও পারদর্শিতা স্বরুপ তাঁর বংশ লাভ করে “মীর” উপাধি। সেই সূত্রেই এই মহান সাহিত্যিকের নামের পাশে যুক্ত হয় ‘মীর’। মীর মশাররফ হোসেনের প্রথম যৌবন-জীবন ছিল সম্পূর্ণ অশান্তিময়। তিনি জ্বলেছিলেন দেবদাসের মতো যখন তাঁর প্রথম যৌবনে আসা প্রেমিকা লতিফুন্নেসার বিবাহ অন্য জায়গায় হয়ে যায়। যাই হোক,লিখতে বসেছি তাঁর অমর কীর্তি ‘বিষাদ সিন্ধু’র রিভিউ। “বিষাদ সিন্ধু” হলো মীর মশাররফ হোসেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস। এই উপন্যাসের অভূত জনপ্রিয়তার পেছনের কারণ ছিল এটি ইতিহাসাশ্রয়ে রচিত।
কারবালা প্রান্তরের বিভীষিকাময় ইতিহাসই এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। উপন্যাসটি সর্বমোট তিন খন্ডে বা তিন পর্বে রচিত। প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয় ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১ লা মে। প্রথম পর্বের নাম ছিল “মহরম পর্ব”। এরপর ১৪ আগষ্ট ১৮৮৭ এ প্রকাশিত হয় “উদ্ধার পর্ব” এবং সর্বশেষ “এজিদ-বধ” পর্ব প্রকাশিত হয় ১৮৯১, ১০ মার্চ। উপন্যাসটির আখ্যানভাগ গড়ে উঠেছে হাসানের (রা.) বিষপানে মৃত্যু এবং হোসেনের (রাঃ) কারবালা প্রান্তরে শহীদ হওয়াকে কেন্দ্র করে। শুরুতেই দেখা যায়, জয়নব নামের এক বিবাহিত রমনীর রুপে পাগল হয় এজিদ। তারপর ছল-ছাতুরী করে তার স্বামীকে তার কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে কাসেদের (বার্তাবাহক) সাহায্যে বিবাহের প্রস্তাব পাঠায় তার কাছে। কিন্তু কাসেদ পথের মাঝে আরো দুইজন থেকে ওকালতির দায়িত্ব পায়। তো রীতিমতো সে জয়নব বিবির কাছে গিয়ে প্রথম দুইজন থেকে পাওয়া বিবাহের প্রস্তাব দেয়। শেষে ইমাম হাসান (রা.) থেকে পাওয়া বিবাহের প্রস্তাবও দেয়। জয়নব কবুল করে হাসানের (রাঃ) প্রস্তাব। এরপর থেকে এজিদ হাসানের উপর ক্ষেপে যায়। সে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে কাসেদকে হত্যা করে। পাশাপাশি তার মন্ত্রী মারওয়ানের সাহায্যে ইমাম হাসানের দ্বিতীয় স্ত্রী জায়েদার সাহায্যে ইমামকে বিষ দেয়। অনেকবার বিষ পান করেও ইমাম বেঁচে যান। কিন্তু শেষরক্ষা তবুও হয় না।
ইমাম মারা যান বিষপানে। এরপরের কাহিনী হলো, কুফার রাজা চাতুরি করে ছোট ইমামকে রাজ্যের দায়িত্ব অর্পন করবে বলে তাকে কুফায় ডেকে নিয়ে যায়। কিন্তু ইমাম পথ ভুলে চলে যায় ফোরাত নদীর পাশে অবস্থিত কারবালা প্রান্তরে। সেখানে এজিদের সৈন্যরা ফোরাত নদীর তীর বন্ধ করে দেয়। একফোঁটা পানির জন্য মারা যায় অসংখ্য শিশু-বৃদ্ধা। আরবের মহাবীররাও জীবন দেয় একবিন্দু পানির জন্য। শেষে যখন আর কেউ অবশিষ্ট থাকে না তখন ছোট ইমাম একা একা যান সম্মুখ যুদ্ধে। তিনি ফোরাত নদী মুক্ত ও করে ফেলেন। কিন্তু তবুও শেষে তাকে প্রাণ হারাতে হয়।
তাঁর বুকের উপর বসে মাথা কেটে ফেলে এজিদের সেনাপতি নিষ্ঠুর সিমার। এরপরের কাহিনী হলো উদ্ধার পর্বে মোহাম্মদ হানিফা এসে ইমামের আত্মীয় পরিজনদের উদ্ধার করে। শেষে এজিদ-বধ পর্বে দেখা যায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর দামেস্ক হানিফার পদতলে আসে। কিন্তু সে সময় হানিফা তার ভ্রাতার পুত্র (হোসেনের) জয়নাল আবেদিনকে রাজা ঘোসনা করে। শেষে এজিদ যখন প্রান্তর থেকে পলায়ন করে তখন হানিফা তাকে ধাওয়া করে। এজিদ ঘটনাক্রমে দামেস্কেই এসে পৌঁছায়। এবং সেখানেই অলৌকিক ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। হানিফা দৈববাণীতে ক্রোধান্বিত হয়ে পড়ে। সে ঘোড়ায় চড়ে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করতে করতে দামেস্ক থেকে বের হতে থাকে। পরে যুদ্ধক্ষেত্রে হানিফা অলৌকিক ঘটনায় প্রাচীরে বন্দি হয়ে পড়ে। এই হলো সংক্ষিপ্ত কাহিনী বিষাদ সিন্ধু’র।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: “বিষাদ সিন্ধু” ইতিহাস আশ্রয়ে রচিত বলা হলেও এই উপন্যাসে অসংখ্য অবিশ্বাস্যকর কাহিনী ফুটে উঠেছে। সাথে উপন্যাসে অসংখ্য বিভ্রান্তিকর ইতিহাসও তুলে ধরা হয়েছে। উপন্যাসে দেখা যায়, ইমাম হোসেনের শির কাটার পর যখন সিমার তা এজিদের দরবারে নিয়ে পৌঁছায় তখন ইমামের শির আপনা-আপনি উপরে উঠতে থাকে। এবং একসময় গায়েব হয়ে যায়। উপন্যাসে আরও দেখা যায়, কারবালা প্রান্তরে ইমামকে দাফন করার জন্য তার মা-বাবা স্বর্গ থেকে নেমে আসে। সাথে আসে অসংখ্য পয়গম্বর-ফেরেশতা। পুরো উপন্যাসটি গড়ে উঠেছে লোকমুখে প্রচারিত পুঁথি অনুসারে। কোনো সুনির্দিষ্ট ইতিহাস আশ্রয়ে এটি রচিত হয়নি। শেষ করার পর মনে হলো এটি মহাভারত কিংবা রামায়নের কাল্পনিক কাহিনীগুলের মতো একটি! যাইহোক, তবুও জনপ্রিয় উপন্যাস এবং মহাকীর্তি বলেই কেনা। এবং সে সূত্রে পড়াও যায়। হ্যাপি রিডিং
আরও পড়ুন- লাল নীল দীপাবলি বই রিভিউ