চিঠি- আব্দুল হান্নানের মুক্তগদ্য
কাগজে লিখিত সংবাদের আদান প্রদানের মাধ্যম চিঠি। চিঠি অনেক রকম থাকতে পারে। ব্যক্তিগত চিঠি, অফিস আদালতের চিঠি, শিক্ষা সংস্কৃতির চিঠি, পারিবারিক চিঠি, প্রেম ভালোবাসার চিঠি। রকম ভেদে চিঠি অনেক রকম হতে পারে। সর্বপ্রথম কবে কোন যুগে পৃথিবীতে চিঠি চালু হয় তা সঠিক জানা যায়নি। তবে খোলাফায়ে রাশেদীন হযরত ওমর (রা.) এর সময় চিঠির প্রচলন ছিল।
ভারতবর্ষে শের শাহের আমলে ডাকবিভাগের প্রচলন শুরু হয়। তবে ব্রিটিশ শাসনামলে আমাদের দেশে ডাকবিভাগ সর্বত্র প্রচলন শুরু হয়। ঘরে ঘরে ডাকের মাধ্যমে চিঠি আসা যাওয়া করতো। সেদিন চিঠি পাওয়া বড়ো আনন্দের ছিলো। চিঠি আনন্দেরও হতে পারে বেদনারও হতে পারে। তবে যে চিঠিটি ১৯৭১ এ ১৯শে নভেম্বর মা বেদেনা খাতুনের হাতে এসে তা ছিল ভয়ংকর যন্ত্রণার ও আতঙ্কের। কে বা কারা চিঠিটি বেদানা খাতুনের হাতে তুলে দেয় তা মনে রাখতে পারেনি বেদানা খাতুন। চিঠিতে তেমন কোন লেখা ছিল না, ছিল শুধু রক্তাক্ত হাতের ছাপ, আর ছিল একটি নাম এনায়াতুল। জননী বেদানা খাতুন স্পষ্ট দেখতে পেলেন তার একমাত্র ছেলের রক্তাক্ত হাতের ছাপ। যে সন্তানের জন্য তিনি দীর্ঘ সাতটি মাস রাতকে দিন করেছেন, দিনকে রাত, সেই একমাত্র সন্তান এনায়াতুল। আজ যেন তার সামনে স্পষ্ট ভেসে ওঠলো, তবে জীবিত নয় মৃত অবস্থায়। সেই সাত মাস আগে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল এনায়াতুল। আর সেদিন থেকেই মা বেদানা খাতুন উন্মুখ করে বসে থাকতেন ছেলের জন্য। কোন খবর পাচ্ছেন না। আজ খবর পেয়েছেন যা চিঠির মাধ্যমে তা অতি ভয়ংকর। বেদানা খাতুন জীবনের সমস্ত আকাঙ্ক্ষা আশা-ভরসা, আনন্দ উল্লাস সবই যেন ডুবে যেতে লাগল এক অন্ধকার গভীরে। রক্তমাখা চিঠিটি বুকে নিয়ে তিনি ডুকরে কেঁদে ওঠলেন। সঙ্গে সঙ্গে পড়ে গেলেন মাটিতে। অব্যক্ত এক বেদনা তাকে টেনে নিয়ে গেল জীবনের শেষ প্রান্তে। এই মৃত্যুই আমাদের স্বাধীনতার পুরস্কার। আমাদের গর্বের ধন, বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান।
*লেখক- আব্দুল হান্নান, একাধারে কবি, ছড়াকার, সাংবাদিক ও মুক্তচিন্তক। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার কালটিয়া গ্রামে ৩ মার্চ ১৯৩৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- ছন্দহারা, এখানে আকাশ নির্বাক, ফিরে এলো না যারা, শতাব্দীর অন্তরালে ইত্যাদি।
আরো পড়ুন- চর্যাপদ সাহিত্য পুরস্কার