তুলির নতুন জামা- সুলেখা আক্তার শান্তা- গল্প

Mostafizur Rahman
Mostafizur Rahman

Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.

সব বয়সী মানুষের নতুন পোশাকের প্রতি আকর্ষণ থাকে। ছোটদের থাকে হয়তো একটু বেশি। তুলির খুব শখ নতুন জামার। অনেকদিন ধরে মায়ের কাছে বায়না, মা আমার একটা নতুন জামা দাও। মা অসহায়, মেয়ে দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু বলে না। রেহেনা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ভাবে আজ যদি তুলির বাবা বেঁচে থাকতো তাহলে মেয়ের আবদার পূরণ করত। স্বামীর মৃত্যুর পর ছিন্নমূল জীবন তার। দজ্জাল ভাই বউয়ের কারণে বাপের বাড়িতেও ঠাঁই পায় না। প্রতিজ্ঞা করে কারো মুখাপেক্ষী হবে না সে। কাগজের ঠোঙ্গা বানিয়ে কোনভাবে দিন চলে।

নিয়মিত ঘর ভাড়া দিতে পারেনা। বাড়িওয়ালা সেই সুযোগ নেয়। বাড়িওয়ালা দবির হোসেন বলে, তোর কষ্ট দেইখা আমার ভালো লাগেনা। আমার কথা শোন দেখবি কোন কষ্ট থাকবো না। আমি তোর সব চাওয়া পাওয়া পূরণ করবো। রেহানা অনেকদিন হলো এই অপমান সহ্য করছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে, আমরা গরীব আর কিছু না থাক আমাদের ইজ্জত আছে। আপনি যে প্রস্তাব দিছেন, আর কোনদিন বলবেন না এই কথা। দবির হোসেন কুপ্রস্তাবে রাজি করাতে না পেরে ঘর ভাড়ার জন্য চাপ দেয়। রেহানা বলে, আগামী সপ্তাহের টাকা পাইলে আপনার ঘর ভাড়া শোধ করে দেবো। দবির মুখ ভেংচি মেরে বলে, আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত আমার চলবো কী কইরা? ঘর ভাড়া দেওয়ার মুরদ নেই খুব তো বড় বড় কথা হিকছোস। কথায় কথা বাড়বে, অসহায় রেহেনা চুপ করে থাকে। ঘর ভাড়া দিতে পারে না সহ্য তো তাকে করতেই হবে। এই কাজ দিয়ে আর চলেনা। গায়ে গতরে শক্তি আছে, বেশি রোজগার হয় এমন কাজ ধরতে হবে। কী কাজ করবে যেখানেই যায় পুরুষের লালসার শিকার হতে হয়। অনেক কষ্টে মান ইজ্জত নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে সে। মেয়েটা বড় হচ্ছে স্কুলে ভর্তি করতে হবে। মেয়ের কোন আবদার সে পূরণ করতে পারে না। রেহেনা কাজের সন্ধানে বের হয়। পাশের ঘরের রহিমার মা একটা কাজের খোঁজ দেয়। কাছেই এক হোটেলে কাজ। বেশ ব্যস্ত হোটেল। রান্নায় সাহায্য করা এবং আনুষঙ্গিক কাজ। বেতনও ভালো। রেহানা মনে মনে খুশি হয়। কয়েক মাস কাজ করে ঘর ভাড়া, ধার দেনা পরিশোধ করতে থাকে।

তুলি বায়না ধরে, মা এখন তো তুমি আমাকে নতুন জামা দিতে পারবা। হ্যাঁ মা পারব। বড়লোকের মেয়েরা যেমন জামা পরে তোমাকে সেরকম জামা কিনে দেবো। আর কয়টা দিন ধৈর্য ধরো। আরেকটু দেনা শোধ করি। সামনে ঈদ, ঈদেই তোমাকে নতুন জামা কিনে দেবো। মা তুমিও নতুন কাপড় নিবা। মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে বলে, ওরে আমার লক্ষী মা কয় কী! আমার কিছু নিতে হইবো না মা, তোমারে দিতে পারলেই আমি খুশি। মেয়ে মায়ের পরিশ্রান্ত মুখে হাত বুলিয়ে অনেক স্বপ্নের কথা বলে। আমি পড়ালেখা করবো, বড় হয়ে চাকরি করব তখন আর তোমার কাজ করতে হবে না। ঠিক আছে মা আমি তোমাকে পড়ালেখা করাবো। সামনে ঈদে ঘনিয়ে আসছে, মা মেয়ের বিশাল স্বপ্ন। রাত্রে শুয়ে মা মেয়েতে অনেক কথা হয়। মা বলে মেয়েরে, এত সুন্দর জামা কিনে দেবো যাতে দেখতে আমার মেয়েকে পরীর মতো লাগে। তুলি বলে, মা পরী কি দেখতে অনেক সুন্দর? আমি কি তেমন সুন্দর হতে পারবো? রেহানা বলে, আমার মেয়ে অনেক সুন্দর তাকে পরীর চেয়ে সুন্দর লাগবে।

রেহেনা রেস্টুরেন্টে কাজ শেষ করে। লাল্লু আর কবীরকে বলে, আমার তো কাজ শেষ। মালিকের কাছ থেকে বেতন নিয়া, মেয়ের জন্য জামা কিনবো আর বাজার সদাই করব ঈদের। লাল্লু বলে, আপা তোমারে আনন্দ দেইখা মনে হচ্ছে আজকেই ঈদ। হ্যাঁ আমার খুব আনন্দ লাগছে। মেয়ের অনেক দিনের স্বপ্ন একটা নতুন জামার। আমি মেয়েকে জামা কিনে দিবো।

রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি অসুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছে। বাবুর্চির কাজটাও এখন রেহানাকে সামাল দিতে হয়। রান্নার কাজটা সে ভালই পারে। সে ভাবে দুনিয়াময় মেয়েরা রান্নার কাজ করে কিন্তু বাবুর্চি হয় পুরুষরা।‌ মালিকের কাছে রেহানার একটু বেশি কদর। মালিকের কাছ থেকে বেতন নেয়। মালিক একটু বেশি সময় থাকতে বলে। রেহানা জানায় তার একটু কেনাকাটা আছে শেষ করেই সে চলে আসবে। রেহেনা মার্কেট ঘুরে মেয়ের জন্য সুন্দর একটা পোশাক কেনে। কল্পনায় ভাসতে থাকে, জামাটায় মেয়েকে কেমন লাগবে। নিশ্চয়ই সুন্দর লাগবে। মেয়েকে নিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাবে। সবাই বলবে তোমার মেয়েকে পরীর মতো লাগছে।

রেহেনা বাকি কাজগুলো সারতে রেস্টুরেন্টে ফিরে আসে। লাল্লু আর কবীরকে মেয়ের জামাটা দেখায়। দুজনাই খুব প্রশংসা করে পোশাকটার। হঠাৎ ঘটে যায় এক দুর্ঘটনা। রান্নাঘরে গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তে দাউদাউ করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছোটাছুটি করলেও কেউ ভেতর থেকে বের হতে পারে না। হতভাগী রেহানার স্বপ্ন পরিণত হলো নিষ্ঠুর দুঃস্বপ্নে। আর ফেরা হলো না মেয়ে তুলির কাছে। সীমাহীন অনিশ্চয়তায় নিক্ষিপ্ত হলো ছোট্ট মেয়ে তুলির ভবিষ্যৎ।

 

আরো পড়ুন- শাশ্বত বোসের গল্প

Mostafizur Rahman
Mostafizur Rahman

Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top