লাল নীল দীপাবলি- বই রিভিউ

Mostafizur Rahman
Mostafizur Rahman

Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.

বইয়ের নাম: লাল নীল দীপাবলি

লেখক: ড. হুমায়ুন আজাদ

বইয়ের ধরন: প্রবন্ধগ্রন্থ।

পৃষ্ঠা: ১০৪

মূল্য: ১০০ টাকা

প্রথম প্রকাশ: অক্টোবর, ১৯৭৬

ব্যক্তিগত রেটিং: ৪.৮/৫

লাল নীল দীপাবলি ~ বাংলা সাহিত্যের সুখময় জীবন আলেখ্য

‘সাহিত্য হচ্ছে আলোর পৃথিবী, সেখানে যা আসে আলোকিত হয়ে আসে; কালো এসে এখানে নীল হয়ে যায়, অসুন্দর হয়ে যায় সুন্দর শিল্পকলা ।’

ড. হুমায়ুন আজাদকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের একজন প্রথা বিরোধী বহুমাত্রিক লেখক। বিক্রমপুরের শ্রীনগরে জন্মগ্রহন করা প্রতিভাবান এই লেখক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। পিএইচডি করেছেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানের ওপর। হুমায়ুন আজাদের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭০টির বেশি; ১০টি কাব্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৮টি কিশোরসাহিত্য, ৭টি ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তাকে ১৯৮৬ সালে বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার এবং ২০১২ সালে সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম এবং ভাষাবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্যে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়। হুমায়ুন আজাদ রচিত ‘লাল নীল দীপাবলি’ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম নন্দিত একটি বই।

ভাষা সৃষ্টির পর থেকে কিভাবে সৃষ্টি হলো আমাদের বাংলা সাহিত্যের, কিভাবে বিবর্তনের রাহ পাড়ি দিয়ে আমাদের কাছে পৌঁছালো নতুন সাহিত্য ধারার, কিভাবে সৃষ্টি হলো আধুনিক বাংলা সাহিত্যের!

সুগম ছিল কি সেই পথ? না মোটেও সুগম ছিল না। বাংলা ভাষার মতো বাংলা সাহিত্য ও শুরুর দিক থেকেই ছিল প্রতিবাদী। শাসকের নিপীড়নের প্রতিবাদ করেই গর্জে উঠেছে বাংলা সাহিত্য।

৯৫০ থেকে ১২০০ সাল পর্যন্ত প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে মধ্যযুগ এবং ১৮০০ পরবর্তী আধুনিক যুগে বাংলা সাহিত্যের টিকে থাকা এবং পরিবর্তনের ধারা সুস্পষ্ট ও সাবলীল ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে বইটিতে।

পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবার থেকে ‘চর্যাপদ’ আবিষ্কারের পর শুরু হয় মহাদ্বন্দ্বের। কারণ বাংলা পন্ডিতরা দাবি করেন চর্যাপদ বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন। অসমীয়ারা দাবি করে একে অসমীয়া বলে, ওড়িয়া পন্ডিতেরা দাবি করেন একে ওড়িয়া বলে। এভাবে মৈথিলিরা এবং হিন্দিভাষীরা দাবি করেন তাদের বলে। গর্জে উঠেন বাংলা ভাষার পন্ডিতেরা- ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, সুকুমার সেন প্রমুখ। প্রমাণ করেন চর্যাপদ অন্যকোনো ভাষা নয়, বরং বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন। বীরদর্পে শুরু হয় বাংলা সাহিত্যর পদযাত্রা।

সাহিত্যের আদি নিদর্শন হচ্ছে কাব্য তথা কবিতা। বাংলা কবিতার প্রথম আলো জ্বলে উঠেছিল সেই চর্যাপদেই। ‘টালত মোরে ঘর নাহি পড়বেশী; হাড়ীত ভাত নাহি নিতি আবেশী’- চর্যাপদের সেই কবিতার রূপ বদলে গিয়ে কিভাবে সৃষ্টি হলো মঙ্গলকাব্য, কিভাবে ভাষা ও সাহিত্যের রূপের বদলে নতুন ছোঁয়ার স্পন্দনে স্পন্দিত হলো কবিতা। কবিতার প্রভাব ছিল অনেকটা বৎসর। আদি যুগ থেকে শুরু করে মধ্যযুগ সবখানেই লাল নীল দীপাবলি হয়ে আলো ছড়িয়েছে কবিতা। কখনো বলেছে দেবতার কথা, কখনো মানুষের কথা। তারপর নতুন সম্রাট হিসেবে বাংলা সাহিত্যে গদ্যের আর্বিভাব হয়। চারদিকেই যে আজ গদ্যের জয়জয়কার! গদ্য ছাড়া কি চলে একটি মুহুর্ত! বলতে গেলে চলেই না। ‘আলালের ঘরের দুলালে’র মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় বাংলা উপন্যাসের। তারপর সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখলেন ‘দুর্গেশ নন্দিনী’। এটিই ছিল তার প্রথম উপন্যাস। ‘দুর্গেশনন্দিনী’-কেই বলা হয় বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস। শুরু হয় উপন্যাসের যাত্রা। অবশ্য শুরুর দিকে নাটকে বাংলা সাহিত্য তুলনামূলক গরিব হলেও বুদ্ধদেব বসুর হাত ধরে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলা নাটকের পরিমণ্ডল। তারপর এগিয়ে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সূর্য হয়ে আলো ছড়িয়ে যেতে থাকেন সাহিত্যের সকল শাখায়। ‘সং অফারিংস’ নামক ইংরেজি কবিতা সংকলনের জন্য ১৯১৩ সালে লাভ করেন নোবেল পুরস্কার। হুমায়ুন আজাদের ভাষায়, “আকাশে সূর্য ওঠে প্রতিদিন, আমরা সূর্যের স্নেহ পাই সারাক্ষণ। সূর্য ছাড়া আমাদের চলে না। তেমনি আমাদের আছেন একজন, যিনি আমাদের প্রতিদিনের সূর্য। তাঁর নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। “[ পৃষ্ঠা – ৮৬ ]

বাংলা সাহিত্যের পরিচয় ঘটে বিশ্ব সাহিত্যের সাথে। রবীন্দ্রনাথ এসে বাংলা সাহিত্যকে পরিচালনা করেন নিজের মতো করে। সেই যুগকে বলা হয় ‘রবীন্দ্র যুগ।’ এ যুগে সাহিত্যের সব স্থাপনাই গড়ে উঠেছে শব্দ দিয়ে। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ সব কিছুই দৃঢ় হয়ে আসে এ যুগে। এ রাজ্যের বাইরে থেকেও কবিতা লিখেছেন অনেকে। তাদেরকে বলা হয় পঞ্চপান্ডব। মহাভারতে পান্ডুর পাঁচ পুত্র পঞ্চপান্ডব নামে পরিচিত ছিল। কথিত আছে এই পাঁচ পুত্রই বীর্যশালী এবং দেববলে উৎপন্ন। কেউই পান্ডুর ঔরসজাত ছিলেন না। তেমনিভাবে সাহিত্যের পঞ্চপান্ডবেরাও ছিলেন রবীন্দ্র বলয় মুক্ত। উনারা হলেন: অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। মজার বিষয় এরা সকলেই ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র। জীবনানন্দের কথা বলতে গিয়ে লেখক লিখেছেন, “বাঙলার অতীত ও বর্তমান প্রাকৃতিক শোভা তার কবিতায়ই অপরূপ হয়ে ফুটে উঠেছে। কোমলতা তার কবিতার বড়ো বৈশিষ্ট্য, তবে শেষ দিকে তাঁর কবিতা হয়ে উঠেছিলো কিছুটা কর্কশ। আধুনিক কালের অধিকাংশ শ্রেষ্ঠ উপমা রচনা করেছিলেন জীবনানন্দ দাশ।” [ পৃষ্ঠা- ৯৫]।

‘লাল নীল দীপাবলি’ একটি সুখপাঠ্য বই হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে আমার কাছে। তাছাড়াও আমরা সবাই সাহিত্যের অংশ। কেউ কবি, কেউ গল্পকার, কেউবা ঔপন্যাসিক, কেউ বা ছড়াকার। তবে সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সাধারণ মানুষ, যাদেরকে নিয়েই আসলে সাহিত্য। তাই বইটি সকল পাঠকদের ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য বলে আমি মনে করি।

লেখকের প্রিয় নাজু, বাদল এবং মাতিনকে উৎসর্গ করা এই বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে (বাংলা ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে)। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন সব্যসাচী মিস্ত্রী। তাছাড়াও ১৯৭৩ সালে। ‘দৈনিক বাংলা’ র সাতভাই চম্পায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল এটি। ড, হুমায়ুন আজাদ রচিত এই বইটিতে সিসিলির প্রকৃতির মতো সহজ ভাষায় ফুটে উঠেছে বাংলা সাহিত্যের বিবর্তন ধারা। সতত পরিবর্তনশীল সমাজে সাহিত্যও সর্বদা পরিবর্তিত হয়। কখনো হাতে কলমে, কখনো বা মানুষের মুখের ভাষায়। তার সুবাদে বেশ পরিবর্তিত হয়েছে আমাদের বাংলা সাহিত্য। বইটি না পড়লে তা জানা হতো না কখনোই।

বাংলা ভাষার মতো বাংলা সাহিত্যও ছিল প্রতিবাদী। তাকেও বিদ্রোহের রাহু পাড়ি দিয়ে পৌঁছুতে হয়েছে। আজকের এই স্বাধীন জগতে। তাই বইটির আরেক নাম “বাঙলা সাহিত্যের জীবনী।” বইটি পড়ে হাজার বছর ধরে পথ হাঁটা আমিও প্রেমে পড়ি বাংলা সাহিত্যের। কখনো চণ্ডীমঙ্গলের সোনালি গল্পে, মনসামঙ্গলের নীল দুঃখে, রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলে এবং সবশেষে হুমায়ুন আজাদের শক্তিশালী হাতে লেখা ” লাল নীল দীপাবলি ” বইটির পাতায় পাতায়।

চর্যাপদের “কা আ তরুবর, পাঞ্চ বি ডাল, চঞ্চল চি এই পৈঠা কাল ” থেকে শুরু করে বিষ্ণু দে’র ” ক্রেসিডা ” কবিতার কয়েকটি পঙক্তি মালা পড়ে তীব্র মেদুরে মুগ্ধ হয়ে হারিয়ে যাই সাহিত্যের রাজ্যে। তাই আমার মতো সৌখিন পাঠক তথা ছেলে, বুড়ো, কিশোর, কবি, সাহিত্যিক সবার কাছেই বইটি সুখপাঠ্য হবে বলে আমি মনে করি।

বইটি যতবার পড়ি ততবারই মনে হয় যেন মিশে গেছি উর্ণনাভের জালকে আবদ্ধ এক অফুরন্ত ভালবাসায়, যেখানে ধবল বক হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে নির্জনতম কবি জীবনানন্দ দাশ, রামধনুর মতো সৌন্দর্য বিলিয়ে দিচ্ছে অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র, আকাশ হয়ে ডেকে আছে কবিগুরু রবী ঠাকুর, রণতূর্য হাতে বিশান বাজাচ্ছে কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

রিভিউ লেখক:  ফাহাদ হোসেন ফাহিম শিক্ষার্থী, পশুপালন অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ।

 

আরও পড়ুন- এক পেয়ালা হাইকু বই রিভিউ

Mostafizur Rahman
Mostafizur Rahman

Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.

Scroll to Top